উজ্জ্বল কুমার সরকার নওগাঁঃ- চারদিকে শুধু ধান আর ধান। দেখে মনে হবে হাজার বিঘার মাঠ। সেখানে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের সোনার ফসল ধান। আর সেই ধান কাঁটছে বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা নিজেরাই শ্রমিকের মতো ধান কাটছে। আবার কয়েক জনকে গরু চড়াতেও দেখা গেছে।
বলছি নওগাঁর বদলগাছীর খরস্রোতা ছোট যমুনা নদীর কথা। নদীর পাশ দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ চোখে পড়ে নদীটির বুকে ধান চাষ। শুকিয়ে যাওয়ায় বদলগাছী উপজেলার তেজাপাড়া, কাদিবাড়ী ও কাষ্টডোব পাশাপাশি এলাকায় ধান চাষ করেছেন শত শত কৃষক। সেই নদীর বুকে কয়েকজনকে ধান কাটতে দেখা যায়। আবার অনেক জায়গা থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে কথা হয় তসলিম, আফজাল, রফিকুল, শামিম ও মোস্তফার সাথে।
তারা জানান, আমরা ১০-১২ জন মিলে নদীর বুকের বেশ কিছু জায়গায় ধান চাষ করেছি। তাই নিজেরাই ধান কাঁটছি। এই ধান দিয়ে আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। অবশ্য বৃষ্টির কারণে পানি জমতে শুরু করেছে। আর কয়েকদিন পর পানিতে ভরে যাবে নদীটি।
তারা আরও জানান, উত্তর দিকে তেজাপাড়া থেকে দক্ষিণে প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন লোকজন এই নদীর বুকে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। নদী শুকালে আমরা ধান চাষ করতে পারি। যা দিয়ে আমাদের সংসার চলে। নদীর বুকে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে এসেছেন কয়েক জন যুবক তারা জানান, প্রায় দেড়-দুই মাসে আগে এই নদী শুকিয়ে গেছে। তবে যেখানে যার মানানসই। নদীতে থাকবে পানি, আর মাঠে হবে ধান। এমন দৃশ্যই ভালো লাগবে সকলের। আর যে যার মতো সুবিধা খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক। নওগাঁর নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় রাস্তায় নামা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি এ্যাড. ডিএম আব্দুল বারী বলেন, বিভিন্ন নদী, খাল-বিল, প্রাকৃতিক বনায়নে ভরপুর আমাদের মাতৃভূমি এই বাংলাদেশ। কিন্তু আমাদের বিরূপ আচরণের কারণে আমরা নিজেরাই প্রকৃতিকে বিভিন্নভাবে ধ্বংস করে ফেলছি। নওগাঁ সহ সারাদেশের নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি জনসচেতনতাও এর জন্য দায়ী। তবে নদী শুকিয়ে গেলে সেখানে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা সেটা খারাপ কিছু না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে চাষ করলে ভালো হয়। এতে করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, বোরো মৌসুমে উপজেলায় ১১ হাজার ৭শত ৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এছাড়া নদীর ধারে উল্লেখযোগ্য হারে ধান উৎপাদিত হয়েছে। কারণ নদীর পাশের জমিতে পলির আস্তরণ জমে এবং সেখানে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সেখানে ধান, সবজিসহ সব ধরণের ফসল ভালো উৎপাদিত হয়ে থাকে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ছোট যমুনা নদীসহ কয়েকটি নদী ও খাল পুন:খননের জন্য আবেদন দেওয়া আছে। অনুমোদন পেলে যেকোনো সময় নদী খননের কাজ শুরু হবে। এদিকে নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেনের চেষ্টায় বদলগাছী উপজেলায় ছোট যমুনা নদীর ৩৩ কিলোমিটার অংশের পুন:খনন কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন হলে যেকোনো সময় বাস্তবায়ন হবে।