বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় ইরি-বোরো নতুন ধান কাটা শুরু
হয়েছে। এই নতুন ধান বর্তমানে কৃষকের জীবন পাল্টে দিয়েছে। কৃষকরো এখন ব্যস্ত সময় পার
করছে। পাকা ধানের সোনালি রং আর পাকা ফসলের গন্ধে ভরে উঠেছে উপজেলার জনপদ।
গ্রামে গ্রামে চলছে ধান তোলার উৎসব। কাক ডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কৃষক-কৃষানী ধান
তোলার কাজে সময় পার করছে। কেউ কেউ ক্ষেতে নতুন ধান কাটছে। কেউ কেউ তা ক্ষেত থেকে
মাথায়,বিভিন্ন যানবাহনে ঘরের আঙিনায় নিয়ে আসছে। মহিলারও বসে নেই। তারা মনের
আনন্দে ধান কাটা মৌসুমী শ্রমিকদের জন্য রান্না করছে। কেউ কাঁচা খড় বাড়ির আঙনায়
বিছিয়ে দিচ্ছে। ধান ছাড়া অন্য কোনো দিকে ফিরে তাকানোর অবসরটুকো কারো নেই।
আজ ০৪ মে, উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দমমদা, সান্দিড়া, তারাপুর,ছাতনি, মালশন সহ
কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে মৌসুমী ধান কাটা শ্রমিকরা বোরা ধান
কাটছে। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত্রে ধান ভাঙার যন্ত্রে কৃষকরা মন প্রতি ৫০০ টাকা দিয়ে ধান
ছড়িয়ে নিচ্ছে। কৃষানীরা সেই নতুন ধান বাড়ির আঙিনায় বিছিয়ে দিচ্ছে। সেই ধান
শুকিয়ে গেলে তা বস্তায় তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। পথে পথে ছড়িয়ে আছে সোনালী খর। এলাকার
সব গ্রাম যেন এক উৎসবে পরিনত হয়েছে। মাথার ওপর সুর্য পুড়িয়ে দিচ্ছে সব। কৃষক মনে
মনে বলছে,পুড়–ক। ফোঁটায় ফোঁটায় শরীরে ঘাম জমছে,ঝরে পড়ছে তা শরীর বেয়ে। কুষক মনে
মনে বলছে,ঝড়–ক। এসবে কারো কষ্ট মনে হচ্ছে না। ধানই যে তাদের জীবন, তাদের সব। তাঁদের
আগামী দিনের শক্তি। সাহস।
বর্তমানে গ্রামগুলিতে কৃষকের কাজের কোন শেষ নেই। পুরোনো দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। সবাই
এখন ব্যস্ত। মাছে মাঝে পুব আকাশে মেঘ দেখা দিলে কৃষকের মুখ ভার হয়ে পড়ছে। তখন তাঁরা
আরো ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এদিকে সন্ধা ঘনিয়ে আসে। বজ্রপাতে এখন অনেক স্থানে কৃষক মারা
পড়ছে। তাই বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক কৃষক পরিবারের সব সদস্য নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরে।
বাড়ির কৃষানীরা রাতের খাবারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে এসময় কৃষকরে মুখে ভাত
ওঠে রাতের বেলায়। তবু সুযোগ বুঝে কোন কোন কৃষানী ব্যস্ত হয়ে পড়ে ধানঝাড়াই,বাতাসে
মেলে দেওয়া।
’ফসল কাটা,কাটা ফসল খলায় নিয়ে আসা, ঝাড়াই-বাছাই করা- নানা কাজের শেষে তবে তো
খেতের ধান ঘরের সৌভাগ্য হয়ে ওঠে-’ জানান সান্দিড়া গ্রামের কৃষব রমজান (৬২)। তিনি জানান,
৪ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। ধান রোপণ, ধানের জমির পানির দাম, জমিতে নানা ওষুধ
দেওয়া,আগাছা দমন, ধান কাটা- প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিছু টাকা হাওলাত
আছে। এখন আবাদে তেমন লাভ নেই। বাব-দাদার পেশা,বদল তো করতে পারিনা। তাছাড়া ধান ঘরের
লক্ষী, আশা-ভরসা। তাই এখন মনের আনন্দে কাটা মারার কাজ করছি। মনে আর কষ্ট নেই।
আদমদীঘি কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী, কুষকদের মতো আমরাও খুশি। আমরা কৃষক
ভাইদের পারমর্শ দিয়েছি। কেউ যেন পাকা ধান কাটতে বিলম্ব না করে। বোরো আবাদ ভাল হয়েছে।
আশা করছি এবার বাম্বার ফসল হবে।