হারুন অর রশিদ, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতাঃ পারাপারের দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে তিস্তাপারের মানুষের। শেষমেশ ধসে পড়লো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে কাজ শেষের আগেই দেবে যাওয়া সেই ভাইরাল সেতুর অর্ধেক অংশ। ফলে গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে মানুষের নদী পারাপারের দুর্ভোগ লাঘব হওয়ার স্বপ্ন।
জানা যায়, উপজেলার বেলকা বাজারের উত্তর পাশে বয়ে যাওয়া তিস্তার শাখা নদী নৌযোগে পারাপার হতেন বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। মালামালসহ যাতায়াত করতেন নৌকায় কষ্ট করে। নৌকা ধরতে একটুখানি বিলম্বেই অপেক্ষা করতে হতো প্রায় ঘন্টা খানেক। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো অসুস্থ রোগীর স্বজনদের। বাদ পড়তো না স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীরাও। সময় মত ক্লাস ধরতে বাড়ি থেকে বের হতে হতো দেড় থেকে দুই ঘন্টা আগে। নৌকা ধরতে না পারলে কখনো কখনো দুই, এক ঘন্টা করে ক্লাসও মিস হতো শিক্ষার্থীদের।
স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু করার উদ্যোগ নেয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ। নকশা করে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৩৪৪ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট প্রসস্থ সেতুটি তৈরিতে ব্যয় ধরা হয় ২৭ লাখ টাকা। কাজ পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ।
২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি অবধি কাজ না করেই টাকাও উত্তোলন করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। বিষয়টি জানাজানি হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় কাজ। শেষ হয় জুনের মাঝামাঝি। কিন্তু কাজের মান নিম্নমানের হওয়ায় কয়েকদিন পরেই মাঝখানে দেবে যায় সেতুর একাংশ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায় চরাঞ্চলের মানুষের। পারাপার হন নৌকা দিয়ে আবারও। তবুও আশা ছিল সেতুটি আবার ঠিক করা হবে। কিন্তু গত মঙ্গলবার পানির তোড়ে ভেঙে যায় সেতুর উত্তরের দেবে যাওয়া সেই অংশসহ প্রায় অর্ধেকটা। ফলে হতাশাগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কাজের নিম্নমানের কারণে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিনের কষ্ট আর দূর হলো না। এখন বাড়তি টাকা ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে তাদের। ঘটছে শিক্ষায় ব্যাঘাত।
স্থানীয়রা জানান, তিন যুগ ধরে যাতায়াতের কষ্ট থেকে মুক্তি মিলছে না আমাদের। প্রতিদিন ১০ টাকা করে দিলে মাসে ব্যয় হচ্ছে ৩০০ টাকা। তাছাড়া রোগীদের হাসপাতালে এবং কৃষিপণ্য হাটে নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। এ থেকে রেহাই পাবো কবে?
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, কাজের মান নিম্ন হওয়ায় সেতুটির কয়েকটি পিলার গত জুনেই দেবে যায়। মঙ্গলবার সেই ভাইরাল সেতুর অর্ধেক অংশ ভেঙে গেছে। লোকজনের পারাপারে সমস্যা হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ বলেন, আমি এখানে যোগদান করার আগেই সেতু নির্মাণ ও বিল সম্পন্ন প্রদান করা হয়েছে। এখানে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।