নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলাকে বলা হয় লিচুর রাজধানী। এখানকার মোজাফফর জাতের লিচুর আকারে বড় ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে বেশ পরিচিত রয়েছে। কিন্তু এবার শিলাবৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপদাহের কারণে লিচুর ফলন অর্ধেক নিচে নেমে এসেছে। এতে করে বাগান কিনে লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ীরা।
যেসব গাছে লিচুর ভারে গাছের ডাল ভেঙে পড়তো। সেই গাছগুলোতে এখন শুধু সবুজ পাতার দেখা মিলছে। অন্যান্য বার এক একটি লিচু গাছে ৫-৭ হাজার লিচুর ফলন হলেও এবার সেইসব গাছে ১০০০ লিচুর দেখাও মিলেনি।অন্যদিকে, লিচুর ফুল দেখে মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ীরা লিচু বাগান কিনলেও শিলাবৃষ্টিতে ফল ঝড়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন তারা। অনেকে বিভিন্ন এনজিও থেকে সুদে টাকা নিয়ে বাগান কিনলেও অর্ধেক দামেওবিক্রি করতে পারেননি মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ফলে লাখ লাখ টাকা লোকসানে পড়তে হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগান জুড়ে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ২/৪ টি করে লিচুর ঝোপা দেখা মিলেছে। অনেক গাছে পাতা থাকলেও লিচুর দেখা মিলেনি। পুরো বাগান জুড়ে ১৫ থেকে ২০ টি লিচু গাছ থাকলেও ৩ থেকে ৪ টি গাছে অল্প পরিমানে লিচু দেখা গেছে। তবে লিচুর ফলন কম হলেও লিচুর আকার বেশ বড় দেখা গেছে। শ্রমিকরা গাছ থেকে লিচু ভেঙ্গে নিচে রাখছেন। আর গাছের নিচে বসে লিচু বাছাই ও আঁটি বাঁধার কাজ করছে শত শত নারী-পুরুষরা।
অন্যদিকে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর বটতলার লিচুর সবচেয়ে বড় আড়ত। উপজেলার প্রায় সিংহভাগ লিচু এ আড়তে আনা হয়। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক যোগে ব্যবসায়ীরা লিচু সরবারহ করেন। অন্যান্য বার প্রতিদিন ৫০-৬০ টি ট্রাক ভর্তি লিচু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবারহ করা হতো। কিন্তু এবার প্রতিদিন ১০-১৫ ট্রাক লিচু কেনাবেচা হয়েছে।
৫০ গাছের লিচু বাগান কিনে লোকসানে পড়া আফজাল হোসেন বলেন, এবার লিচুর ফলন নেই। যে টাকার বাগান কিনেছি, তার অর্ধেক টাকাও উঠেনি। এ বছর শিলাবৃষ্টিতে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবং খড়ায় আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এবার আমরা বাগান ব্যবসায়ীরা পথে বসে গিয়েছি। গাছে যে ফল ছিল, তা খড়ায় পুড়ে গেছে। যা লিচু আছে তা গাছ থেকে পাড়তে শ্রমিক খরচের টাকাই উঠছে না। এতে করে বাগান কিনে লোকসানে পড়ে গেছি।
২ বিঘা জমির লিচুর বাগান কেনা আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর লিচুর ফলন কম। শিলে সব লিচু ঝড়ে গেছে। এ বছর বহু টাকা লোকসানে রয়েছি। ঝণ নিয়ে বাগান কিনেছি। এ ঝণ কি ভাবে শোধ করবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
নাজিরপুরের আরেক ব্যাবসায়ী হান্নান আলী বলেন, গত কয়েক বছরেও এমন ফলন দেখিনি আমরা। এ বছর শিলাবৃষ্টিতে আমাদের এলাকার সব লিচু শেষ। দুই, চারটা যাও লিচু আছে, তা খড়ায় পুড়ে গেছে। লিচুর বাজার দাম মোটামোটি ভালো থাকলেও ফলন না থাকায় লোকসানে পড়েছি আমরা।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুনর রশিদ বলেন, এ বছর প্রথমে শিলাবৃষ্টিতে লিচুর ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। এবং অতি খড়ার কারণে ফল নষ্ট হওয়ার কারণে এ বছর গুরুদাসপুরে লিচুর ফলন কম হয়েছে। উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। ৮.৫০ মেট্রিকটন লিচুর ফলন হয়েছে।