মোঃ পাপুল সরকার, গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ নেপেন (৪০) ও সুভাসিনি (৩৫) দম্পতি। আয়ের উৎস বলতে অন্যের জমি বর্গাচাষের পাশাপাশি খালে-বিলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি। এতে যে টাকা মেলে তা দিয়েই মেটাতে হয় সংসারের সাত সদস্যের মৌলিক চাহিদা। তাই উৎপাদন খরচ বাঁচাতে গরুর হালের পরিবর্তে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন এই দম্পতি। এ কাজে পালাক্রমে কখনো স্বামীকে আবার কখনো স্ত্রীকে গরু এবং চাষির ভূমিকা রাখতে হচ্ছে তাদের।
রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পবনাপুর (চরেরহাট) গ্রামে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
যেখানে খোলা প্রান্তরে ইরি-বোরো মৌসুমে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের সাহায্যে জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। সেখানে ব্যতিক্রম শুধু নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি।
তীব্র ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে পানিতে ভিজে জমি সমান করতে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে হালচাষ করছেন তারা। বাঁশের তৈরি মইয়ের দুপাশে দড়ি বেঁধে দুহাতে টেনে গরুর ভূমিকা রাখছেন সুভাসিনি এবং শক্ত হাতে মই চেপে রেখেছেন নেপেন। ফলে কাঁদাজলে ভেজা উঁচু-নিচু জমি সমান হয়ে চাষের উপযোগী হয়ে উঠছে।
জানতে চাইলে এ দম্পতি জানান, তাদের নিজেদের কোনো জমি নেই। প্রায় এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তারা। আজ দশ শতক জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য মই দিচ্ছেন। বর্গা নেওয়া জমি থেকে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার অর্ধেক পান জমির মালিক। বাকি ধান দিয়ে সারা বছরের ভাতের যোগান মেটাতে হয়। তাই উৎপাদন খরচ কমাতে টাকা দিয়ে গরুর হাল না কিনে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মাধব এসএসসি পাশ করেছে। ছোট ছেলে নিখিল, মেয়ে লক্ষ্মী ও প্রতিমা হাইস্কুলে পড়াশুনা করছে। এছাড়া অর্জুন নামে কোলের এক সন্তান রয়েছে তাদের।
পবনাপুর এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি চান মিয়া বলেন, নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি আমার প্রতিবেশী। তারা জেলে পরিবারের সদস্য। সমাজে টিকে থাকার জন্য তারা লড়াই করে চলেছেন।
পবনাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি এবং হাল চাষের পর মাটি সমান করতে মই দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত এ কাজটি গরু দিয়ে করা হয়ে থাকে। কিন্তু নেপেন-সুভাসিনি দম্পতি আর্থিক সংকটের কারণে নিজেই এ কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছেন।