পার্বত্য চট্টগ্রামকে খ্রিস্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতারা। তারা বলছেন, বর্তমান সময়ে কিছু উপজাতি নেতার নেতৃত্বে পার্বত্য শাসনবিধি-১৯০০ আইন বহাল রাখার আন্দোলন চলছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণকে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব সম্প্রদায়ের ও জাতিগোষ্ঠীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি-১৯০০ বাতিল করতে হবে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবর রহমান বলেন, বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালি পরিবারগুলো। সেখানে উপজাতি পরিবারগুলো রাষ্ট্রীয় যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, বাঙালিরা তা পাচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯০০ সালের শাসনবিধি আইন বলবৎ রেখে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের সংবিধানের শাসন খর্ব করা হয়েছে। এ কারণে এ অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠী অধিকারবঞ্চিত রয়েছে।
যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নানা বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, রাজনৈতিকভাবে তিন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। এক্ষেত্রে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, এটি উন্মুক্ত করে সারা দেশের মতো ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করা বা একজন চেয়ারম্যানের সমপরিমাণ ক্ষমতা দিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান বাঙালিদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পদটিও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত।
এক্ষেত্রেও একজন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাঙালি প্রতিনিধি থাকা উচিত। সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য পদটি উপজাতিদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা খুবই দুঃখজনক।
নাগরিক নেতা মজিবর রহমান বলেন, উপজাতিদের জন্য আয়কর ফ্রি হলেও বাঙালিদের আয়কর দিতে হয়। তাই অর্থনৈতিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা গরিব থেকে গরিব এবং উপজাতিরা দিন দিন ধনী হচ্ছে। আয়কর প্রদানে পার্বত্য অঞ্চলের সব সম্প্রদায়ের জন্য একই নিয়ম চালু করা উচিত।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত কোটা থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে আজ উপজাতিদের প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষিত। আর বাঙালিদের মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষিত। উপজাতি ছাত্র-ছাত্রীরা কোটার মাধ্যমে বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারে, বাঙালিরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। চাকরির ক্ষেত্রেও বাঙালিরা বিশাল বৈষম্যের শিকার। কোটার কারণে উপজাতিরা সব ক্ষেত্রে চাকরি পায়, আর বাঙালিরা বঞ্চিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংক ঋণ নিলে উপজাতিদের কোনো সুদ দিতে হয় না, কিন্তু বাঙালিদের চড়া সুদ দিতে হয়। উপজাতিরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে তাদের অনেক ক্ষেত্রেই তা মওকুফ করা হয়। কিন্তু বাঙালিরা পরিশোধ করতে না পারলে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা হয় এবং জেলখানায় যেতে হয়। লোনের ক্ষেত্রে সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য একই নীতি অবলম্বন করতে হবে। এ সকল বৈষম্যের অবসান দাবি করেন তিনি।