বাংলার আপেল খ্যাত পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা এলাকার পেয়ারার উৎপাদনে আশংকাজনকভাবে ধস নামায় কয়েক হাজার পেয়ারা চাষী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এক দিকে ফলনে ধস অন্যদিকে পেয়ারা প্রতি বছর জুন মাসে বাজারজাত করলেও এবারে জুলাই মাসে পেয়ারা বাজারজাত করা হয়। এক মাস পরে পেয়ারা, গাছে পরিপক্ক হয় এবং ফলন কম হয় । তাছাড়া ও পেয়ারা চাষিরা বাজারে ৪০০ হতে ৪৫০ টাকা মন দরে পেয়ারা বিক্রি করলে তাঁতে খরচ বাদে লাভের মুখ তো দেখছেনই না বরং তারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন ।
মওসুম শুরুর প্রথম দিকে কিছুটা চড়া মূল্য থাকলেও বর্তমানে প্রতি কেজি পেয়ারা ২/৩ টাকা দরে বিক্রি করায় চাষীদের বেশিরভাগই তাদের মূলধন হারাতে বসেছে। একই সাথে পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ পরিমাণ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। দেশে মোট উৎপাদিত পেয়ারার শতকরা ৮০% পেয়ারা উৎপন্ন ও সরবরাহ করা হয়। নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানা এবং পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলার নরেরকাঠি, আলতা, বঙ্কুরা, কাঁচাবালিয়া, গাভা, বাস্তুকাঠি, সৈয়দকাঠি, ইন্দ্রের হাওলাসহ ঝালকাঠির ভিমরুলি, কীর্তিপাশা, শেখেরহাট, বাউকাঠি, পোষন্ডায় পেয়ারার চাষ হয়।
নেছারাবাদ উপজেলার ৩৫ গ্রামে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ করে চাষিরা। এবারে হেক্টর প্রতি ১০ টন পেয়ারা উৎপাদন হয়। নেছারাবাদের ২২ টি গ্রামে পেয়ারা চাষ করা হয়। ওই এলাকার প্রায় ১০০০ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন কম হওয়ায় অনেক চাষীকেই ঋণগ্রস্ত হতে হচ্ছে। সরেজমিন আটঘর কুড়িয়ানা এলাকার পেয়ারা চাষীদের সাথে আলাপ কালে আশুতোষ মিস্ত্রী ও নিখিল হাওলাদার জানায়, এবারে পেয়ারা সঠিক সময়ে পরিপক্ক না হওয়ায় এবং বাজার মূল্য কম থাকায় আমারা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।
কুড়িয়ানার শৈলেন মিস্ত্রী, সুবোধ মন্ডল, ধীরেন্দ্রনাথ সিকদার বলেন, আমাদের এলাকার কোন চাষীই চলতি বছর পেয়ারা বিক্রি করে মূলধন ঘরে তুলতে পারবেনা। কুড়িয়ানা ইউনিয়নের পেয়ারা বাগানের মালিক শৈলেন মিস্ত্রী জানায়, পেয়ারা চারশো টাকা হতে সাড়ে চারশো টাকায় বিক্রি করেছি তাতে খরচ বাদে লাভের মুখ চোখে দেখেনি বরং হয়ে পড়েছি ঋণগ্রস্থ।, কুড়িয়ানার প্রবীণ ব্যক্তি সুজন মল্লিক বলেন, এ্যানথ্রাক্স রোগের আক্রমণ এবং বয়সী গাছ কেটে ফেলার কারণে মওসুমে পেয়ারা চাষ অর্ধেকে নেমে এসেছে। তা ছাড়া পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া হওয়ায় সকল ব্যবসায়ীরা পড়েছি বিপাকে। তাছাড়া পেয়ারা সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় গাছ থেকে তোলা পেয়ারা দু’একদিনেই পচন ধরে যায়। ফলে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহীতা ক্ষুদ্র চাষীরা মূলধন হারিয়ে একদিকে যেমন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরেছে অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা।
উপজেলা কৃষি অফিসার চপল কান্তি নাথ বলেন, নেছারাবাদ উপজেলার ৩৫ টি গ্রামে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ৫ থেকে ৬ হাজার কৃষক পেয়ারা চাষ করে। এবারে হেক্টর প্রতি ১০ টন পেয়ারা উৎপাদন হয়। নেছারাবাদের ২২ টি গ্রামে এই পেয়ারা চাষ করা হয়। পেয়ারার মূল্য ২০০ – ৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। পেয়ারার মূল্য কম থাকায় চাষিরা পড়েছেন বিপাকে হচ্ছেন ঋণগ্রস্থ।