৭৫ বছরে পা দিয়েছে সামরিক জোট ন্যাটো। ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রিগ্যান ইনস্টিটিউটে ১৯৪৯ সালে ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ন্যাটো সম্মেলনের প্রথম দিন উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বক্তৃতায় একটিই উল্লেখযোগ্য বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, রাশিয়াকে রুখতে ইউক্রেনকে আরও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দেওয়া হবে। অতীতে এই সিস্টেম ইউক্রেনকে রাশিয়ার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেছে। গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ন্যাটোর ৭৫তম শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
বাইডেন বলেন, পুতিন ইউক্রেনকে সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত করতে এবং ইউক্রেনের সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চান। এছাড়া যুক্তরাজ্যের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার রাশিয়ায় আঘাত হানার জন্য ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের এসব ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনকে পরামর্শ দিয়েছেন।
এদিকে প্রারম্ভিক বক্তব্যে বাইডেন ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর আইনপ্রণেতাদের প্রশংসা করে বলেন, ন্যাটো আগের চেয়ে এখন আরও শক্তিশালী। ন্যাটোর ৩২ সদস্য দেশের মধ্যে ২৩টি দেশ নিজেদের মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করতে পারছে।
বাইডেন আরও ঘোষণা দেন- যুক্তরাষ্ট্র জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া ও ইতালির সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের জন্য আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও কৌশলগত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাঠাবে।
ন্যাটো সম্মেলনে বক্তব্যে বাইডেন ন্যাটোর গুরুত্ব ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন এবং ইউক্রেনকে সমর্থনে অটল থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিকে এই ন্যাটো সম্মেলনের ওপরই নির্ভর করছে বাইডেনের প্রার্থিতা থাকা না থাকা। আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে নির্বাচনী বিতর্কে সবচেয়ে খারাপ পারফরমেন্স করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখন ঘরোয়া এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে টিকে থাকার লড়াই করছেন।
বাইডেন তার সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তিনি ন্যাটোর সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সক্ষমতা ও দক্ষতার প্রমাণ রাখবেন। বিশ্লেষকদের মতে, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এই সম্মেলন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা।
তবে ন্যাটো নিয়ে তেমন উচ্ছ্বসিত নন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় এলে কী হতে পারে, সেটা ন্যাটোর এই সম্মেলনে অন্যতম আলোচনার বিষয়। পাশাপাশি, জো বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারণাকে নবজীবন দিতে এই সম্মেলনকে কাজে লাগাতে চাইছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ২৭ জুন ট্রাম্পের সঙ্গে সিএনএনে প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন বাইডেন। যা তার প্রচারণায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে ‘বুড়ো’ বাইডেনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
গত সোমবার এমএসএনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেন, আমাদের মিত্ররা মার্কিন নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ছাড়া আর কে এটা করতে পারতো? আমি ন্যাটোর সম্প্রসারণ করেছি। আমি ন্যাটোকে স্থায়িত্ব দিয়েছি। আমি নিশ্চিত করেছি যেন এমন একটি জোট টিকে থাকে, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একাত্ম হয়ে চীন-রাশিয়াসহ বিশ্বের যেকোনো শক্তির মোকাবিলা করতে পারে। আমরা প্রকৃত উন্নয়নের পথেই আছি।