মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ বীজ তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে জয়পুরহাটে। চড়া মূল্যে বীজ কিনে ফলন ও আশাতীত দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে কৃষকদের মধ্যে সংশয়ও কাজ করছে।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বেশকিছু দিন থেকে পেঁয়াজের দাম চড়া। এ মৌসুমে পেঁয়াজ বীজের দাম বেশি। তারপরও কৃষকরা পেঁয়াজ রোপণ করবেন। গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে ভালো দাম পেয়েছেন কৃষকরা। খরচ বেশি হলেও পেঁয়াজ চাষ ব্যাহত হবে না।
জয়পুরহাট জেলার বিভিন্ন গ্রামের পলী এলাকার জমিগুলোতে শীত মৌসুমের পেঁয়াজ বীজ রোপণ করতে শুরু করেছেন কৃষকরা। অতি চড়ামূল্যে বীজ কিনতে গিয়ে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হাট বাজারে পেঁয়াজ বীজের প্রকার ভেদে (ছোট, বড়) ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা প্রতি মণ (৪০ কেজি) বীজ বিক্রি হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন, এ রকম বীজ গত রোপণ মৌসুমে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবার বীজের দাম কৃষকের নাগালের বাইরে।
জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার চকজয়কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক বাবু হোসেন, মতিয়র রহমান কালবেলাকে বলেন, এবারে পেঁয়াজ বীজের দাম তিনগুণ। ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বীজ বিক্রি হচ্ছে। তাদের দেড়- দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রোপণ করার নিয়ত ছিল। বীজের দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় সে আশা ভঙ্গ হয়েছে এবার। তারা এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করবেন। বীজের ছোট বড় আকার ভেদে এক বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৪ মণ বীজ প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে এক বিঘা জমির জন্য বীজ কিনতে তাদের ৪০- ৫০ হাজার টাকা। আবাদে রাসায়নিক সার, সেচ ও শ্রমিকের দিন মজুরি তো আছেই।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর, আমিড়া গ্রামের কৃষক শাহানুর, আফজাল হোসেন ও হাফিজার রহমান বলেন, গত মৌসুমে তারা ৪ হাজার টাকা মণ দরে বীজ কিনে ছিলেন। এবার দাম তিনগুণ। ১০-১২ হাজার টাকা মণ। আফজাল হোসেন আরও বললেন, তিন মাসের ফসল হিসেবে গত মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করে ভাল লাভ হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম কমে যায়।
আফজাল ও শাহানুর রহমান বললেন পেঁয়াজ চাষের কষ্টের কথা। ঘর বাড়ি ছেড়ে রাত জেগে জমিতে এক মাস পাহারা দিতে হয় পেঁয়াজ খেত। পেঁয়াজ রোপনের পর ২ মাস পর থেকে এক মাস ধরে জমিতে রাতে পাহারায় থাকতে হয়। না হলে এক রাতেই চোরেরা তুলে নিয়ে যায় সব পেঁয়াজ।
জেলার আক্কেলপুর উপজেলার জামালগজ্ঞ বাজারের পেঁয়াজ বীজ ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম ও বাবলুর রশিদ কালবেলাকে বলেন, এবার ছোট সাইজের পেঁয়াজ ১২-১৩ হাজার টাকা এবং একটু বড় সাইজ ৯ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। গত মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে দাম খুবই বেশি। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি খুব একটা ভালো না।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে এ পেঁয়াজ রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এ পরিমাণ জমিতে থেকে ৪ হাজার ২০০ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ বীজ ছোট সাইজ (জিরো সাইজ) ১২ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ফসলে প্রতি বছর কমবেশি ভালো লাভ হয়। এ জন্য উৎপাদন খরচ বেশি হলেও কৃষক পেঁয়াজ চাষ করবে। উৎপাদন ব্যাহত হবে না।