বগুড়া প্রতিনিধিঃ- মেলা মানেই অভূতপূর্ব আনন্দ উচ্ছ্বাস। ‘পোড়াদহ’ মেলাটি সেই আনন্দ ও উচ্ছ্বাসকে আরও একধাপ যেন বাড়িয়ে দেয়। মেলায় মাছ, মিষ্টি ছাড়াও বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খাবারের পাশাপাশি সব বয়সীদের দৃষ্টি কাড়ছে ‘হোন্ডা’ খেলা।
চারদিক কাঠ দিয়ে ঘিরে মাটির ওপর বানানো হয়েছে কূপ। নাম দেওয়া হয়েছে এ আর বাইক ও কার খেলা। কূপ কথাটা শুনতে অদ্ভূত লাগলেও আয়োজনটা একটি খেলা।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বগুড়ার গাবতলীতে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় মাঠে দেখা যায়, কূপের মাঝখানে দু’টি রঙ চটা পুরোনো মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার। ১০ মিনিটের এ খেলা দেখতে ৩০ টাকায় টিকেট কাটতে হয়।
কূপটি তৈরিতে লোহার অ্যাঙ্গেল, খুঁটি, বাঁশ, নাটবল্টুসহ আনুষঙ্গিক আরও অনেক কিছুর ব্যবহার রয়েছে। বড় সড় জায়গা নিয়ে বানানো এ মৃত্যুকূপে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে খেলা দেখানো হয়। খেলাটি যখন চলে তখন দর্শককে তা দমবন্ধ করে দেখতে হয়। চালক অত্যন্ত দক্ষভাবে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পুরো ১০ মিনিট কূপে গাড়ির ঘূর্ণি ছোটান।
এদিকে খেলা দেখতে দর্শকরা কাঠের সিঁড়ি বেয়ে কূপের উপরে চারপাশে কাঠের তৈরি ছাদের মত অংশে দাঁড়িয়ে যান। সময় হওয়া মাত্র চালক রিংকু প্রথমে মোটরসাইকেল ওঠে পড়েন। মাইকে ঘোষণা দেওয়া মাত্র মোটরসাইকেল চালু করে সেই কাঠেরকূপের চারপাশে ঘুরতে থাকেন। খেলোয়াড়রা কখনো কখনো এক হাত ছেড়ে কখনো বা দু’হাত ছেড়ে নানা কসরত দেখাতে থাকেন। ফটফট আওয়াজ তুলে মোটরসাইকেল ঘূর্ণি খেতে থাকে তীব্র গতিতে। কিছুক্ষণ পর আরেকটি মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটতে শুরু করেন নাইমুর। মোটরসাইকেল চালানোর পর এবার শুরু হয় প্রাইভেটকারের ঘূর্ণি।
রিংকু প্রাইভেটকার নিয়ে একইভাবে কূপের মধ্যে দাপিয়ে বেড়ান বেপরোয়া গাড়ি চালানোটাই দর্শকদের আনন্দের খোরাক। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। অল্প বয়স থেকেই জীবনবাজী রাখা এ খেলা তিনি খেলে আসছেন বিভিন্ন মেলা আর উৎসব আয়োজনে। তাদের মোট ৭ থেকে ১০ জনের একটি টিম। এ খেলাকে ঘিরেই জোটে তাদের পরিবারের জীবিকা।
রিংকু বলেন, এটা কোন যাদু বা মন্ত্র বিদ্যা নয়। শুধুমাত্র দক্ষতা। ছোট থেকে তিনি এ খেলা রপ্ত করেছেন। এ জন্য তাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। জীবনকে অনেকটা হাতের মুঠোয় নিয়ে এ খেলা খেলতে হয়। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি খেলা। পুরো বিষয়টি দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতার ওপর নির্ভর করে। এ যাবত খেলার বয়সে তেমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
পোড়াদহ মেলার প্রথম দিন সবাই মাছ-মিষ্টি কেনাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। কেউ কেউ বিনোদন নিতে ছুটে আসছেন খেলা দেখতে। মেলায় এবার দুইদিন মোটরসাইকেল খেলা থাকবে। দ্বিতীয় দিন বউমেলায় এ বিনোদনের পাশাপাশি নারীরা রকমারি খেলনা আর কসমেটিকস সামগ্রী কিনতে ব্যস্ত থাকবেন।