প্রাচীন যুগের ইন্দিরা বিলুপ্তির পথে
গৌরব প্রসাদ সাহা, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি: বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন। আর এই জীবন বাঁচাতে প্রাচীনকালে বিশুদ্ধ পানি ও জলের অভাব মেটাতে খনন করা হতো ইন্দিরা বা কূপ । বরেন্দ্রভূমির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা মিলেছে প্রাচীনকালের ইন্দিরার। প্রাচীন যুগে ইন্দিরার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই ইন্দিরা গুলি মূল্যহীন। এই বর্তমান সময়ের মানুষ, টিউবওয়েল, বিদ্যুৎ চালিত মর্টার, গভীর নলকূপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূগর্ভস্থল থেকে পানি উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করছে। ফলে প্রাচীন যুগের ইন্দিরা বা কূপ বর্তমান প্রজন্মের কাছে শুধুই ইতিহাস।
প্রাচীন যুগে মানুষ পুকুর ও নদীর পানি পান করতো ফলে বহু রোগ বালাই দেখা দিত। তখনকার বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পারেন অশুদ্ধ পানি পান করার কারণে এসব রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কূপের জন্ম দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের ফলে ইন্দিরা বা কূপের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার শুরু হয়। জমিদাররা পানিকে আরও বিশুদ্ধ করার জন্য কূপে পাইপ বসিয়ে কূপের পানি পাম্প করতেন। এ কারণে আজও জমিদার বাড়িতে অনেক পুরনো ইন্দিরা বা কূপের দেখা মিলে। ধীরে ধীরে মানুষ যখন সভ্য সমাজে সুশিক্ষিত ও জ্ঞানের সমৃদ্ধ হয়েছে তখন নলকূপ তৈরি হয়েছে। সংস্কৃত শব্দ ইন্দ্রগর বা ইন্দ্র এবং আগর থেকে উদ্ভূত। ইন্দ্র অর্থ বৃহৎ এবং আগর অর্থ পাত্র, ইন্দ্র শব্দের অর্থ বড় কূপ।
এ বিষয়ে বরেন্দ্রভূমির ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ক গবেষক ও লেখক প্রভাষক মো. আব্দুর রাজজাক (রাজু) বলেন, বরেন্দ্রভূমিতে পানীয় জলের অভাব অনাদিকাল থেকে। বিশেষ করে কাঠ বরিন্দা অঞ্চল যেমন, পত্নীতলা, ধামইরহাট, সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুরে গ্রীষ্মকালে পানীয় জলের অভাব ছিলো তিব্র। তখন এলাকার রাজা, জমিদার, জোতদার, অভিজাত পরিবার ও গ্রাম প্রধানগন নিজে ও জনগণের সুবিধার কথা ভেবে সামর্থ্য ভেদে "ইন্দারা" খনন করতেন। ইন্দারাগুলো অঞ্চলভেদে ইন্দারা, ইন্দিরা, ইদারা, কূপ, কুয়া , পাতকুয়া, রিংকুয়া, ইনকুয়া, ইত্যাদি নামে পরিচিত।
পরবর্তীতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় গভীর ও অগভীর নলকূপের কারনে এই ইন্দারা গুলি এখন প্রায় বিলুপ্ত।