মোস্তাফিজার রহমান জাহাঙ্গীর, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়লই মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন নতুন ভবনের কাজের গুণগত মান ঠিক না থাকায় কাজ সমাপ্ত না করে ঠিকাদার ও সাবেক উপজেলা প্রকৌশলীর যোগসাজোসে চূড়ান্ত বিল উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রধান প্রকৌশলী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি ঢাকা বরাবর অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান খন্দকার।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয় কর্মসূচি (পিডিপি-৪) এর আওতায় বড়লই মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটি নির্মাণের কাজ পায় লালমনিরহাট জেলার এস এস কনস্ট্রাকশন। নির্মানাধীন বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সহ প্রতিষ্ঠানের কমিটিবৃন্দ নির্মাণ কাজের শ্রমিকদের সঠিক ভাবে কাজ করার অনুরোধ জানালেও শ্রমিকরা তাদের নিজের ইচ্ছামত কাজ করে গেছেন। ভবনটি নির্মাণের প্রাক্কলন প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীর নিকট চাইলে ভবন নির্মাণের প্রাক্কলন না দিয়ে টালবাহনা করে ঘুরাইতে থাকে।
অভিযোগে আর জানা গেছে, বিদ্যালয়ের নির্মাণের কাজ এক সময় গিয়ে সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী আসিব ইকবাল রাজিব নিজে ঠিকাদার হিসেবে ভবনের কাজসহ শ্রমিকের মজুরী নিয়মিত প্রদান করিতেন, নির্মাণের কাজ উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল হক তদারকি করিত। অভিযোগে কাজের ত্রুটি হিসেবে সঠিক ভাবে কিউরিং না করা ,নিম্ন মানের ইট দিয়ে গাঁথুনী, দরজার কাঠ নিম্ন মানের, রং করণে ত্রুটি,বিদ্যুতের তার নিম্ন মানের এবং আর্থিন বিহীন বৈদ্যুতিক মিটার,বিদ্যালয় রুমে ফ্যান না থাকা,ভবনের মূল ফটকের গেট না থাকা ,ভবনের বরান্দায় বৈদ্যুতিক বাল্ব নাই, অফিস রুমে আলামারী দেয় নাই, ব্লাকবোর্ড নিম্ন মানের হওয়ায় ব্যবহারে অনুপযোগী,প্লাষ্টারে নিম্ন মানের বালু ব্যবহার করা ও ছাদের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বড়লই মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা জানান, নতুন ভবনে উঠার জন্য প্রধান শিক্ষককে বার জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান এই ভবনের কাজ এখনও শেষ হয়নি আর আমার কাছে হস্তান্তরও করেনি।
অভিযোগকারী প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বকুল জানান, আমার বিদ্যালয়ের নতুন ভবনটি কত টাকা বাজেটে নির্মাণ হয়েছে তা কখনো জানতে পারিনি, এছাড়া কখনো কোনদিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমার চোখে পড়েনি আমি যতটুকু জেনেছি সাবেক প্রকৌশলী মহোদয় আমার এই নতুন ভবনটির কাজ করেছে , এই ভবনটির কাজে অনেক ত্রুটি রয়েছে এবং আমার হাতে এখনো ভবনটি হস্তান্তর করেনি, ত্রুটিপূর্ণ কাজের সমাধানের জন্য আমি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি।
নির্মাণাধীন কাজে কন্টাক্টর দেখভাল করার জন্য আশরাফুল নামে লোককে রেখেছেন তার কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক সুবিধাও নিয়েছেন।
নতুন ভবন নির্মানাধীন এসএস এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্বাধিকারী শাহজামাল জানান,ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান আমাদের কাছে ইট,ফাঠর,খোয়া,বালুসহ অনেক সুবিধা নিয়েছে সর্বশেষ তিনি একটি মোটা অংকের টাকা দাবি করেছেন, টাকা দেইনি বলে তিনি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। তিনি আরো জানান, যে সময় ভবনটির নির্মাণাধীন কাজ চলমান ছিল সে সময় অভিযোগ না করে এখনো অভিযোগ করছেন কেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও একাধিক অভিভাবকবৃন্দ জানান, বিদ্যালয়টির ভবনের কাজ নিম্নমানের হয়েছে, বিদ্যালয়টিতে যে বিদ্যুতের মিটার রয়েছে সেটিতে আর্থিং ছাড়াই সংযোগ দেয়া হয়েছে, এই ভবনে আমাদের ছেলেমেয়েদের পাঠদানে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি, দ্রুত ত্রুটিগুলো সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি নুর ইসলাম জানান, এই নতুন ভবনের কাজ ত্রুটি পূর্ণ রয়েছে, যার কারণে এই ভবনে শিক্ষার্থীদেরকে উঠালে বিপদ হতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন তদন্ত সাপেক্ষে এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।
এ বিষয়ে সাবেক প্রকৌশলী আসিফ ইকবাল রাজিব জানান, নতুন ভবনের কাজ সম্পূর্ণ না হলে প্রধান শিক্ষক কিভাবে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছে আর এই ভবন হস্তান্তর করা হয়েছে। আর আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা একজন প্রকৌশলী কখনো কাজ করতে পারে না।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আকবর কবির জানান , ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরজমিন তদন্ত পূর্বক আমি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন ভবনের কাজের অনেক ত্রুটি পেয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ সানি জানান, বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ করেছেন, আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তে ও সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।