মোস্তাফিজার রহমান জাহাঙ্গীর,কুড়িগ্রাম,প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) এর চাল বিতরণে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ভিজিএফ চালের স্লিপ দিয়ে চাল মাপে কম দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট উপকারভোগী ৩৮ হাজার ৬৩২ টি পরিবার।
৪ এপ্রিল দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে,পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরীব অসহায় দুস্থ মানুষদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে টিনের কৌটায় বিতরণের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারম্যানের লোকজন। সাংবাদিকদের দেখে অসহায় দুঃস্থ মানুষ অভিযোগ জানালে পরে একটি ডিজিটাল পাল্লা নিয়ে এসে বিতরণ চাল মাপ দিয়ে দেখা যায়, একটি স্লিপে ১০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে সাড়ে ৮ থেকে নয় কেজি পাওয়া যায়, দুজন মিলে একটি বস্তায় ২০ কেজি চালের জায়গায় ১৭ কেজি, তিনজন মিলে ৩০ কেজি চালের জায়গায় ২৫ কেজি, এসময় সাংবাদিকরা দায়িত্বে থাকা ট্যাগ অফিসারকে বিষয়টি জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ডিজিটাল পাল্লা দিয়ে চাউল মেপে ১০ কেজির জায়গায় ৯ কেজি পেয়েও কম দেয়া নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায়,এ সময় চেয়ারম্যানকে বললে চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু সঠিকভাবে চাউল বিতরণে অপারগতা প্রকাশ করায়,বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে অবগত করলে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদে এসে সঠিকভাবে চাল বিতরণ শুরু করেন এ সময় ভুক্তভোগীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে ।
পরের দিনই ঠিক আগের দিনের মত চাল বিতরণ অনিয়ম করায় ক্ষোভে ফুলে ফেপে ওঠেন ভুক্তভোগীরা, বিকাল তিনটার আগেই চাল না থাকায় হট্টগোল বাজলে পরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিতরণকৃত চাল বাহির থেকে এনে আবারো বিতরণ শুরু করেন,এবং কিছু মানুষকে চাল দিতে পারে নাই। পরে অনেক মানুষ চাল না পেয়ে ফিরে যান।এ সময় ভুক্তভোগীর চালের স্লিপ ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও উঠে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ওই দিনই সন্ধ্যা বেলা আবারো চাল বিতরণের অভিযোগ ওঠে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
স্লিপের চাল না পাওয়া ৪ নং ওয়ার্ডের ঘোগারকুটি গ্রামের রাজু মিয়া,সিরাজুল হক,মিঠু মিয়া,এনামুল হক ও নওদাবস গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র, আব্দুস সালাম, ফজলু মিয়া জানান, আমরা গরীব মানুষ কাম কাজ করে খাই, কাজ করার জন্য একটু দেরি করে এসেছি এসে দেখি তিনটা বাজার আগেই চাল দেয়া শেষ, অনেক অনুরোধ করেও চেয়ারম্যানের কাছ থেকে উপহারের চাউল নিতে পারি নাই, তোমরা যদি হামাক চাউল না দেন,তাহলে স্লিপ দিলেন কেন,হামার চাউল হামাক দেও।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও ট্যাগ অফিসার হাসান আলী বলেন, চাল মাপে কম দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। কেউ যদি চাল মাপে কম পেয়ে থাকেন তাহলে সামনা-সামনি মাপলেন না কেন? কেউ ১০ কেজির জায়গায় ৮ কেজি চাল পেয়েছেন এমন কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।
বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ভিজিএফ এর চাল এবারে সুষ্ঠু সুন্দরভাবে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। ট্যাগ অফিসার সহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে চাল বিতরণ করা হয়েছিল। ১০ কেজি জায়গায় ৮ কেজি চাল দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। স্লিপ থাকার পরেও চাল না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন দিনের মধ্যে ইউনিয়নের চাল বিতরণ কার্যক্রম সমাপ্তের নির্দেশনা ছিল। তাই বরাদ্দের সমস্ত চাল নির্দেশনা মেনে বিতরণ সম্পন্ন করা হয়েছে।
মাপে চাল কম দেওয়া এবং স্লিপ থাকার পরেও চাল না পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড়ভিটা ইউনিয়নে চাল বিতরণে নয়ছয় হয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।