চলতি মৌসুমে বগুড়া ও শেরপুরে আলু চাষ করে কৃষক লোকসানের মুখ দেখেছেন। সার, কীটনাশক ও জমির লিজ মূল্য বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে, কিন্তু বাজারে আলুর দাম কম থাকায় লোকসান গুনতে হয়েছে। অন্যদিকে, ভুট্টা চাষে লাভের হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।
বগুড়া জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫,৫০০ হেক্টর জমি। অর্জিত হয়েছে ৬০,৪৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ, মোট উৎপাদন ১৩,৩৮,৬২৭ মেট্রিকটন। কিন্তু সার, কীটনাশক ও জমির লিজ মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতি বিঘায় খরচ বেড়ে ৬৫,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৫০,০০০-৫৫,০০০ টাকা।
প্রতি বিঘায় ১০০-১২০ মন আলু উৎপাদিত হলেও জমিতে বিক্রি হয়েছে ১১-১২ টাকা প্রতি কেজি দরে। সর্বোচ্চ দামে হিসাব করলেও প্রতি বিঘায় আয় ৫৭,৬০০ টাকা, যা খরচের তুলনায় কম। ফলে কৃষকদের গড়ে প্রতি বিঘায় ১২,৪০০ টাকা ক্ষতি বহন করতে হয়েছে।
শেরপুরের কৃষক বাদশা মিয়া বলেন, আলু চাষে এবার সব হারিয়েছি। খরচের টাকা তোলা দূরে থাক, ঋণের বোঝা আরও বেড়েছে।
অন্যদিকে, বগুড়ায় ভুট্টা চাষে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলা কৃষি অফিস জানায়, ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪,৬৫০ হেক্টর, অর্জিত হয়েছে ১৭,৭২৪ হেক্টর। মোট উৎপাদন ৯০,৩০০ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি।
প্রতি বিঘায় খরচ ১২,০০০-১৪,০০০ টাকা হলেও ফলন গড়ে ৪০-৪৫ মন। বাজারে শুকনো ভুট্টা ১,০০০-১,৩০০ টাকা এবং ভেজা ভুট্টা ৯০০ টাকা প্রতি মন দরে বিক্রি হচ্ছে। গড়ে প্রতি বিঘায় আয় ৪০,০০০ টাকার বেশি, খরচ বাদ দিয়ে লাভ ২৬,০০০ টাকা।
স্থানীয় কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভুট্টা চাষে খরচ কম, ফলন ভালো। বাজারে দামও স্থিতিশীল। এবার লাভে মন ভরেছে।
শেরপুর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বছর ২,৭০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ২,৭৬৫ হেক্টর জমিতে।
অপরদিকে, শেরপুরে ৩৩৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে । গত বছর ২৪৬০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় ৯২৫ হেক্টর জমি বেশি চাষ হয়েছে ।
কথা হয় শেরপুরের কৃষক আবুল কালামের সাথে তিনি জানান, ভুট্টার চাষে উৎপাদন খরচ কম, রোগবালাইও তুলনামূলকভাবে কম। সে কারণেই অনেক কৃষক ধীরে ধীরে ধান ছেড়ে ভুট্টা বা বিকল্প ফসলে ঝুঁকছেন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবা আকতার বলেন, ভুট্টা চাষে এবার আমরা ৩০০ জন কৃষককে সরকারি প্রণোদনার আওতায় এনেছি। প্রত্যেককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। রোগবালাই ছিল নিয়ন্ত্রণে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করেছেন। ফলে উৎপাদনও খুব ভালো হয়েছে।