শেরপুর, বগুড়া প্রতিনিধিঃ সয়াবিন তেলের ক্রমবর্ধমান দাম এবং মান নিয়ে প্রশ্ন উঠায় দেশের বাজারে শরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ক্রেতারা শরিষার তেলকে শুধু সাশ্রয়ীই নয়, বরং স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবেও বিবেচনা করছেন।
বৃহস্পতিবার বগুড়ার শেরপুরে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সয়াবিন তেলের চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে শরিষার তেলের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাজারে খোলা সরিষার তেল বিক্রি হছে ২০০ টাকা কেজিতে ও বোতলজাত লিটার বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা । অপরদিকে সয়াবিবিন তেলের দাম লিটার ১৯০ টাকা।
পুষ্টিবিদদের মতে, শরিষার তেলে ওমেগা-৩ থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এতে ট্রান্স ফ্যাট না থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ। অপরদিকে অনেক সয়াবিন তেল জেনেটিক্যালি মডিফায়েড সয়াবিন থেকে তৈরি। হাইড্রোজেনেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্টস থাকে, যা শরীরের মিনারেল শোষণ ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
শেরপুর শহরের গৃহিণী নুরজাহান বলেন, “শরিষার তেল রান্নায় ভালো স্বাদ আনে এবং এটি স্বাস্থ্যকরও। সয়াবিন তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে, শরিষার তেল ব্যবহার করাই এখন সঠিক সিদ্ধান্ত।”
হামছায়াপুর গ্রামের গৃহিণী নাফিজা বলেন, “শরিষার তেল রান্নার স্বাদ বাড়ায় এবং গ্রামীণ ঐতিহ্যের অংশ। সয়াবিন তেলের পরিবর্তে আমি এখন শরিষার তেলই বেশি ব্যবহার করি।”
কৃষক তোতা মিয়া জানান, আমি এবার ১ বিঘা জমিতে মেঘি সরিষা চাষ করেছি এতে ৮০০০ টাকা খরচ হয়েছে । ৫ মন সরিষা পাব বলে আশা করছি। এবার বাজারে সরিষার দাম ৩৫০০-৩৬০০ টাকা। এতে ১০ হাজার লাভ হতে পারে। তিনি আরো জানান, ব্যাবহার করার ক্ষেত্রে এক কেজি সরিষার তেল, দুই কেজি সয়াবিন তেলের সমান ।
শেরপুর টাউন কলোনির ‘রাফিয়া স্বর্ণা’ তেল প্রক্রিয়াজাত কারখানার মালিক ইমরান হাসান বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে শরিষার তেলের বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। গ্রাহকেরা দাম এবং স্বাস্থ্য দুটো দিক বিবেচনা করে শরিষার তেলের দিকে ঝুঁকছেন।” বর্তমানে এমন হয়েছে যে, সয়াবিন তেল থেকে বিমুখ হয়ে সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকছে মানুষ ।
কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার ২৬৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে । গত বছর যা ছিল ৩৬৬০ হেক্টর।
শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার সরিষার উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে । কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।