বগুড়ার শেরপুরে বাঙালী নদীর অংশে বৈধ কোনো বালু মহাল নেই। এরপরও থেমে নেই বালু উত্তোলন। বাঙালী নদীর অন্তত আটটি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে নদী তীরবর্তী ফসলি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়াই অবৈধ এই বালু উত্তোলন চললেও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। ফলে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা অবিলম্বে এই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এছাড়া একই দাবি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট লিখিত আবেদন করেছেন বৈধ বালু মহালের ইজারাদার শেরপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন।
অভিযোগে জানা যায়, শেরপুর উপজেলার মধ্যেদিয়ে বহমান বাঙালী নদী। এই অংশে কোনো বালু মহাল না থাকলেও সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর হঠাৎপাড়া ও কল্যানী খেয়া ঘাটে তিনটি শ্যালো মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী লিটন মিয়া, হাসেন আলী ও কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিগত এক সপ্তাহ ধরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীরবর্তী ফসলি জমিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া নদীর অপরপ্রান্তে বিনোদপুর গ্রামে নবনির্মিত বেড়িবাঁধটিও হুমকির পড়েছে। এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বাঁধেও ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। একইভাবে সরকার দলীয় নেতাদের নাম ভাঙিয়ে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের শালফা, বোয়ালকান্দি, গজারিয়া, বড়ইতলী এবং খামারকান্দি ইউনিয়নের ঝাঝর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খোদ শেরপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইজারাদার গোলাম হোসেন বলেন, সম্প্রতি ধুনট উপজেলার বথুয়াবাড়ী ও নান্দিয়ার পাড়া নদী খননের উত্তোলনকিত বালুর টেন্ডার দেওয়া হয়। নিলামে অংশ নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ব্যাংক চালান ও ট্যাক্স-ভ্যাট পরিশোধ করে বালু ক্রয় করেছি। এতে সরকার বিপুল অঙ্কের টাকা রাজস্ব পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের এই বালু ডাইকের পাশেই শেরপুর অংশে বাঙালী নদীর অন্তত আটটি পয়েন্টে ছোট ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। অথচ সরকার একটি কানাকড়িও পাচ্ছে না। এছাড়া অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রির কারণে সরকারি নিলামের বালু বিক্রি করা যাচ্ছে না। এতে ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলেন জানান।
বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, বাঙালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই। এ ধরণের কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বগুড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, বাঙালি নদীর শেরপুর অংশে আমাদের কোনো বালু মহাল নেই। তাই কেউ বালু উত্তোলন করলে সেটি অবৈধভাবে করছেন। আর অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হলে নদী-তীরবর্তী ফসলি জমি ও বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বক্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্তদের পক্ষে মিলন মিয়া বলেন, বাঙালী নদীটি এমনিতেই খনন হবে। তাই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা মৌখিক অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এতে দোষের কিছু দেখছেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।