বগুড়ার শেরপুর থানায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ঘুষ ও অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে পুলিশ লাইনে ক্লোসড করা হয়েছে। মামলার আসামিকে প্রলুব্ধ করে মিথ্যা মামলা সাজানো এবং আসামিপক্ষের সাথে ঘুষ লেনদেনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি নগদ বিশ হাজার টাকা নিয়ে থানা থেকে এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোবারক হোসেন।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগকারী মোবারক হোসেন জানান, গত বছর ১২ মে তার ভাগ্নে আলমগীর হোসেনের স্ত্রী আখি খাতুনের দাম্পত্য কলহের জেরে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনায় উভয় পরিবারের মধ্যে আপোষ মীমাংসা হয় এবং থানা পুলিশ সেই মীমাংসায় মধ্যস্থতা করে। মোবারকের দাবি, এসআই জাহাঙ্গীর আলম আপোষনামা গ্রহণ করে “পরবর্তীতে কারেকশন করবেন” বলে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন।
তবে ঘটনার প্রায় দশ মাস পর, গত ১৩ এপ্রিল আকস্মিকভাবে আখির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে মোবারকসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়। মোবারকের অভিযোগ, এসআই জাহাঙ্গীর আলম তাদের কাছে টাকা দাবি করে ব্যর্থ হয়ে এই মামলায় তাদের নাম যুক্ত করেছেন।
মোবারক আরও অভিযোগ করেন, মামলার আগেই এসআই জাহাঙ্গীর আলম তার ভাগ্নে আলমগীর হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিষয়টি “ম্যানেজ” করার জন্য দুই লাখ টাকা দাবি করেন, যা পরে এক লাখ টাকায় নেমে আসে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু হয়। মোবারকের কাছে এই ঘটনার ২৫ মিনিটের বেশি সময়ের অডিও রেকর্ডিং রয়েছে বলেও তিনি জানান।
মোবারক হোসেন জানান, গত ১৬ এপ্রিল তার স্ত্রীর গর্ভের জমজ সন্তান ফলস অ্যাবর্শনে মারা যায়। এরপরও গত ১৭ এপ্রিল সকালে তিনি থানায় তার গ্রেফতারকৃত ভাগ্নের সাথে দেখা করতে গেলে এসআই জাহাঙ্গীর আলম তাকে মামলার আসামি বলে জানান এবং তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে দুটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
এইসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ এপ্রিল শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী মোবারক হোসেন। সেখানে তিনি অভিযুক্ত এসআই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, এসআই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার কার্যালয় গত ২০ এপ্রিল তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোসড করার আদেশ দিয়েছে। বর্তমানে তিনি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত আছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।