অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর ভালো লাগায় ছোট বেলা থেকে কৃষির প্রতি আগ্রহ হায়দার আলীর। অর্জন করেছেন কৃষি অফিস রাজশাহী বিভাগ থেকে বেশ কিছু ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষনা করেন পেঁপের চারা নিয়ে। সফল হয়ে এক বিঘা জমি লিজ নিয়ে ফলিয়েছেন এ পেঁপে। দিয়েছেন নিজ নামের জাত “হায়দার পেঁপে” ব্যাপক ফলন হয়েছে। জমিতে গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন পেঁপে বাগান। এক একটি পেঁপের ওজন ৩ থেকে ৬ কেজি। সেই পেঁপে চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন। এক বিঘা জমি থেকে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন হায়দার আলী। নিজে আত্মনির্ভশীল হয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করে কৃষি কাজে সহযোগী করিছেন। সঙ্গে রয়েছে স্ত্রীও।
কৃষিকাজ করে সফল হওয়ার গল্পটি বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের গুয়াগাছি গ্রামের পেঁপে চাষী হায়দার আলীর । স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার তার। ছোটবেলা থেকেই অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজ হয়েছেন সফল উদ্দ্যোক্তা। নিজের আত্মতৃপ্তি আর ভালোলাগা থেকেই ১৯৯৮ সাল থেকে কৃষি চাষাবাদ শুরু করেন। এরপর টমেটো, বেগুন, মালটা, কমলা, আঙ্গুরসহ বিভিন্ন কৃষি চাষাবাদে সফল হয়েছেন। তবে স্বপ্নবাজ হায়দার তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য শুরু করেন পেঁপের চাষাবাদ। তিল তিল করে দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষনা করে তৈরী করা “হায়দার পেঁপে” জাতের চারা ১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পেঁপে বাগান করে এলাকায় তাক লাগিয়েছেন।
শেরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলায় কম-বেশি পেঁপের চাষাবাদ হয়। এ উপজেলায় প্রায় ৬৩ হাজার কৃষকের মধ্যে ১ হাজার ৮০০জন পেঁপে চাষাবাদ করে এবং বানিজ্যিকভাবে চাষ করেন ৬০ জন।
চলতি মৌসুমে উপজেলার ৩৫ হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। এসব পেঁপে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় কৃষি অধিদপ্তর।
সরেজমিন গুয়াগাছি গ্রামের মাঠে পেঁপের বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি পেঁপে গাছ। পেঁপে বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে সফল উদ্যোক্তা হায়দার আলীকে।
বাগানের আগাছা পরিষ্কার ও পেঁপে তুলে বাজারে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রতিটি গাছে ঝুলছে অসংখ্য পেঁপে। ১ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছেন এই বাগান। সেখানে নিজ নামের “হায়দার আলী” জাতের চারা রোপণ করেন বাগানে।
জমি চাষ, চারা তৈরী, রোপণ, শ্রমিক, সারসহ এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুই মাসেই বিক্রয় করেছেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
পেঁপে চাষি হায়দার আলীর ছেলে মহাব্বত বলেন, পড়ালেখা পাশাপাশি বাবার সঙ্গে চাষবাদ করি। এর আগে মালটা চাষেও সফল হয়েছে। তবে কমলা ও আঙ্গুর চাষ করেছিলেন কিন্তু তেমন সফল হয়নি।
পেঁপে চাষে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পেঁপে দেখতে এলাকার অনেক মানুষ আসছেন।
জমি দেখতে আসা খলিলুর রহমান জানান, এত সুন্দর বা ভালো পেঁপে হয় কল্পনা করা যায়না। আমরা পেঁপে চাষ দেখে আগ্রহী। এই গুয়াগাছী গ্রামটা যেন পেঁপে গ্রাম হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, পেঁপে খুব দর্শনীয় কোন একটা পেঁপেতে দাগ নেই। তার নিকট হতে অভিজ্ঞতা বা পরামর্শ নিয়ে এই এলাকায় হায়দার পেঁপের সাড়া ফেলবো। তবে আশে পাশের লোকজন বাগানটি দেখেতে আসেছে।
সফল উদ্দ্যোক্তা হায়দার আলী বলেন, সঠিক পরিকল্পনা আর প্রবল ইচ্ছা থাকলে কৃষিতে যে কেউ সফল হতে পারে। আমার কোন জমি ছিলনা। কৃষি কাজ করেই আমার বছরে ৬-৭ লক্ষ টাকা আয় করি। এই এক বিঘা জমিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সব খরচ বাদে আমার লাভ থাকবে প্রায় ৫ লাখ টাকা।
তিনি আরো বলেন, পেঁপে চাষে কৃষককে রোগ বালাই দমন সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হয়। যেমন পাতা কুচকানো, গোড়া পচা রোগ, মোজাইক রোগ ও ছত্রাকনাশকসহ বিভিন্ন রোগ পেঁপে গাছে আক্রমণ করে। কিন্তু আমার এই হায়দার চারাতে তেমন রোগ বালাই নেই তাই খরচ কম লাভ বেশি। ভালো ফলনের জন্য বিশেষ কৌশল
হায়দার আলী বলেন, এক একটি পেঁপে গাছ থেকে মৌসুমে সর্বোচ্চ চার মণ পর্যন্ত পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। এর মধ্যে প্রথম দিকের পেঁপেগুলো ৩ থেকে ৬ কেজি ওজনের হয়। কখনো কখনো ৮-৯ কেজি পর্যন্ত হতে পারে একটি পেঁপের ওজর।
আর দ্বিতীয় ধাপে যে পেঁপে পাওয়া যায় ওই একই গাছ থেকে সেগুলো ২ থেকে ৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, এক বছরে ফল সংগ্রহের পর দ্বিতীয় বছরের নতুন করে গাছ রোপণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
এছাড়াও চারা রোপনের পর ছয় মাসের মধ্যে ফল বাজারে নেয়ার উপযোগী হয়।
উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আব্দুল হান্নান জানান, কৃষি অফিস থেকে কোন প্রজেক্ট না থাকলেও হায়দার আলী নিজ উদ্দ্যোগে ১ বিষা জমিতে পেঁপে চাষ করে এলাকায় তাক লাগিয়েছেন। এতে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়াছে এই উপজেলায়। পেঁপে চাষে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। বেকার যুবকরা পেঁপে চাষে এগিয়ে এলে তারা লাভবান হবেন।