বাংলাদেশকে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখিঃ প্রধানমন্ত্রী ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের বিশেষ করে আইসিটি, অবকাঠামো, টেক্সটাইল এবং পর্যটন খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার স্বপ্ন বাংলাদেশকে একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করা।
তিনি বলেন, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে যা বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষেরও স্বপ্ন, আর তা হলো, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ট্রিলিয়ন-ডলারের অর্থনীতি এবং একটি সম্পূর্ণ উন্নত স্মার্ট জাতিতে পরিণত করা।’ তিনি আরও বলেন, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তারা সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির জন্য দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রচেষ্টা শুরু করেছেন।
শেখ হাসিনা আজ রেডিসন হোটেল অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস সামিট’ শীর্ষক একটি রোড শো’র অনুষ্ঠানে তার বাসস্থান থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভাষণে একথা বলেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শেখ হাসিনা এখানে এসে পৌঁছেন।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য, ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য আরও বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ লক্ষ্য নির্ধারণে বাংলাদেশ তার বাণিজ্যিক পরিস্থিতিকে দৃঢ়তার সাথে শক্তিশালী করে চলেছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমাদের প্রচেষ্টা শুধুমাত্র আমাদের জন্য সুবিধাই দেবে না বরং যারা আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করতে পছন্দ করে তাদের জন্যও লাভজনক প্রমাণিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা খুঁজে নিতে তারা বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ, এটি বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলোর সাথে নিজেকে পরিচিত করার উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, ‘এটিই সময় বাংলাদেশকে আরও ভালোভাবে জানার এবং এর ভবিষ্যতে এখানে বিনিয়োগ করার আমরা আইসিটি, ইলেকট্রনিক্স, অবকাঠামো, টেক্সটাইল, পর্যটন, ভারি শিল্প এবং ছোট শিল্পের মতো খাতগুলোতে নানা সুযোগ সুবিধার প্রস্তাব করেছি। আমাদের সরকার সুন্দরভাবে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বাংলাদেশ সম্ভাব্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যেমন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সর্বোত্তম আয়ের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই আপনারা আমাদের উন্নয়ন যাত্রায় অংশ নিন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন; আমরা আস্থাশীল যে আপনাদের বিনিয়োগ সাফল্যের জন্য প্রাধান্য পাবে এবং আমরা একটি টেকসই অংশীদারিত্বের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি নাগরিক একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য প্রবাসীদের ধন্যবাদ। আমরা আপনাকে আমাদের প্রবৃদ্ধিতে আরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশে বিনিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আসলে, আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ সুরক্ষিত রয়েছে অব্যাহত হাই রিটান্স ইনভেস্টমেন্টের (আরওআই) কারণে। এছাড়া, আমাদের সরকার ব্যবসা-বান্ধব এবং স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে যা আপনার বিনিয়োগের সফলতার নিশ্চয়তা দেয়।’
এছাড়া তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয় এবং বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের রয়েছে সবচেয়ে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ নীতি। এর মধ্যে রয়েছে একটি উদারীকৃত শিল্প নীতি, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, ১০০% বিদেশী মালিকানার ভাতা, একটি সহজ প্রস্থান নীতি, ১৫-বছরের কর ছাড় নীতি, আমদানি করা যন্ত্রপাতির জন্য ভ্যাট ছাড়, সুবিন্যস্ত পরিষেবা এবং আরও অনেক কিছু।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে, আমরা টেকসই দীর্ঘ-মেয়াদী অর্থায়নের জন্য প্রস্তুত আছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, এআই ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ‘আর্থিক সংযোগ’ অনুসরণ করছে। বাংলাদেশ ট্রেডিশনাল কাস্টমার ব্যাংকিংয়ের চেয়ে বিনিয়োগ ব্যাংকিংকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআই ও দক্ষিণ আফ্রিকার চেম্বারের মধ্যে একটি যৌথ ব্যবসায়িক ফোরামও গঠনেরও বাংলাদেশের পরিকল্পনায় রয়েছে। সূত্র: বাসস