বাজারে আসতে শুরু করেছে মৌসুমের নতুন চাল। কমানো হয়েছে চালের আমদানি শুল্ক। তারপরও চালের দাম কমেনি। বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানি হওয়ার ফলেই দাম অপরিবর্তিত রয়েছে, তা না হলে দাম আরও বাড়ত। তবে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে চালের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, গত বছর এই মৌসুমে মোটা চালের (স্বর্ণা ও পাইজাম) দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি। কিন্তু এক মাস ধরে এই দুটি জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। মাঝারি মানের বিআর-২৮ চালের দাম ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি। বাজারে আসা চালের দাম কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে নাজির শাইল আর চিকন (মিনিকেট) চালের দাম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন চাল এখনো দোকানে এসে পৌঁছেনি। আমদানি করা চালও বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। দামচালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করেছে। এতে দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দেশে আসতে শুরু করেছে চাল। এর বাইরে নতুন চাল ওঠায় বেড়েছে সরবরাহ।
তারপরও কেন কমেনি চালের দাম? জানতে চাইলে আড়তদাররা বলেছেন, সরকার মণপ্রতি মোটা ধানের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১ হাজার ৩২০ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়। সেই হিসাবে মিলারদের ধানের কেজিতে ১ টাকা লোকসান হচ্ছে। কিন্তু সরকারও চায় না কৃষকের লোকসান হোক। তবে চাল আমদানি করায় বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল আছে। আবার চালের দাম বাড়ারও কোনো লক্ষণ দেখছেন না বলেও জানান ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, চলতি আমন মৌসুমে ১ কোটি ৭৮ লাখ টন ধান উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে এক তৃতীয়াংশ ধানই কৃষক ঘরে তুলেছেন বলে জানা গেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, সরকারি খাদ্যগুদামে ৭ লাখ ৮৩ হাজার চাল ও ৪ লাখ ২৭ হাজার টন গম মজুদ আছে। বেসরকারিভাবে মজুদ আছে ৪৫ লাখ টন খাদ্য শস্য। সব মিলিয়ে ৫৭ লাখ টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। দিনে ১ লাখ টন চালের গড় চাহিদা ধরা হলে সরকারি বেসরকারি মিলে দেশে চালের মজুদ আছে দুই মাসের।
এমন বাস্তবতায় আমদানিনির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বলেছেন, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র কারণ সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি। এর সঙ্গে সিন্ডিকেট থাকতে পারে। সিন্ডিকেট যদি থাকে সেটা দেখভালের দায়িত্ব সরকারি সংস্থার। প্রকৃত পক্ষে দাম কমানোর জন্য কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। উৎপাদন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি যেসব পণ্য আমদানি করা হয় সেগুলো দেশে উৎপাদন করতে হবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির হিসাব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে সরু চালের দাম বেড়েছে ১২ শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ আর মোটা চালের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ।