বগুড়া প্রতিনিধিঃ- বাড়ল বোরো চাষের খরচ। বগুড়ার বিভিন্ন এলাকার চাষিদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। সেচের জ্বালানি হিসেবে গত বছরে ডিজেল ও বিদ্যুতের বাড়তি দামের সাথে সার, কীটনাশক, বীজ, শ্রমিকসহ ধান চাষে প্রয়োজনীয় উপকরণের বাড়তি দামের প্রভাবেই এবারও বোরো ধান চাষাবাদে খরচ বাড়ছে। বিগত দু’বছর আগে বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকার কিছু বেশি খরচ হলেও গত মৌসুমে বিঘা প্রতি খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার টাকা। এবারও এই খরচ বাড়ছে।
কৃষকরা জানান, গত বোরো চাষ মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচ ও জমি চাষ খরচ যা ছিল তাই-ই আছে। তবে চারা রোপণে বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। কারণ, এখন কৃষিতে স্থায়ী শ্রমিক পাওয়া যায় না। গত বছর এক বিঘা জমিতে চারা রোপণ করতে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা খরচ হলেও এবার তা পড়ছে এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও ধান বীজ ও চারাতেও বছর ঘুরে কিছুটা খরচ বেড়েছে। সবমিলে বিঘা প্রতি ধান চাষে খরচ বাড়বে।
সদর উপজেলার বনানী এলাকার কৃষক আজাহার আলী বলেন, বোরো চাষাবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে আর তাই ধান উৎপাদন খরচও বাড়বে। তবে যে ভাবে খরচ বাড়বে সেই অনুপাতে যদি ধানের দাম পাওয়া যায় তাহলে কোন সমস্যা হবে না।
একই এলাকার কৃষক সামিম হোসেন ও সুমন বলেন, বাড়তি খরচের কারণে বর্তমানে চাষাবাদ করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর বৈরী আবহাওয়ায় নানা ধরণের পোকামাকড়ের আক্রমণে কীটনাশকে বাড়তি খরচ হয়। আবার সিন্ডিকেটের কারণে ধানের প্রত্যাশিত দাম পাওয়া যায় না। তবে মৌসুম শেষে যদি ধানের ভালো দাম পাওয়া যায় তাহলে বাড়তি খরচ পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৬০ হেক্টর বেশি। এ বছর চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৪৩২ মেট্রিকটন, যা গত বছর ছিল ৭ লাখ ২৫ হাজার ৫৩ মেট্রিকটন। বগুড়ায় এবার হাইব্রিড ধান চাষ হবে ১৯ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও উফশী জাতের ধান চাষ হবে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৭১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান চাষ হবে ৭১০ হেক্টর। গত সোমবার পর্যন্ত বগুড়ায় ১ লাখ ৬ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ সম্পন্ন হয়েছে, যা মোট চাষাবাদের ৬০ শতাংশ। খরচ কমানোর পরামর্শ দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, বোরো ধানের উৎপাদনে খরচ কমাতে পরিমিত সেচ ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এছাড়াও পোকামাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহার কম করে জৈব পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমনে গুরুত্ব দিতে হবে।