পাবনা প্রতিনিধিঃ বাড়ির ছাদে বোরো ধানের বীজতলা !। পাবনার বেড়া উপজেলা কৃষি ক্লাবের সভাপতি এমআরএম ফিরোজ এলাকায় ‘কৃষকবন্ধু’ নামে পরিচিত। কৃষি সংক্রান্ত ব্যাপারে স্থানীয় কৃষকদের নানা পরামর্শ ও বিনামূল্যে কৃষি সামগ্রী দিয়ে আনন্দ পান তিনি।
আধুনিক তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার মাধ্যমে কৃষিতে নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করে তাতে কৃষকদের আগ্রহী করাই তার কাজ। গত বছর থেকে তিনি বাড়ির ছাদে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আর এবার তার বিস্তৃতি অনেক বড় পরিসরে। শুধু তাই নয়, তার দেখানো পথে ছাদে বীজতলা তৈরি করেছেন স্থানীয় আরও ১৫ জন কৃষক।
ছাদে বীজতলা তৈরির বিষয়টি নানা দিক দিয়ে লাভজনক হওয়ায় সাড়া ফেলেছে কৃষকদের মধ্যে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সমবায়ভিত্তিক সমলয় পদ্ধতির চাষ চলছে।
ফিরোজসহ উপজেলার ৫০ জন কৃষক এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও ধানচাষের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা রোপণ ও ধানকাটা সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে একই সময়ে করা হবে। সমলয়ে ধান আবাদ করতে হলে চারা তৈরি করতে হবে ট্রেতে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়।
কৃষক তার ফসল এক সাথে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারেন। এসব কারণে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর ও বৃদ্ধি হওয়ায় ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগে। এতে লাভবান হয় কৃষক। এই পদ্ধতিতে বাড়ির আঙিনায় অথবা কৃষিজমিতে ট্রে বসিয়ে তাতে বীজতলা তৈরি করা হয়ে থাকে। কিন্তু ফিরোজ নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকে বীজতলা তৈরির কাজটি করেছেন বাড়ির ছাদে।
শুধু তিনি নিজেই নন, তার পরামর্শে বেড়া পৌর এলাকার আরও ১৫জন কৃষক ছাদে এই সমলয় পদ্ধতির বীজতলা তৈরির মাধ্যমে চারা উৎপাদন করেছেন। যা দ্বারা অন্তত ১শ’ বিঘা জমিতে চারা রোপণের আশা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেড়া উপজেলায় এবারই প্রথম সমবায়ভিত্তিক সমলয় পদ্ধতির চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য উপজেলার ৫০ জন কৃষক নির্বাচিত করা হয়েছে। এসব কৃষকের ৫০ একর জমিতে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হবে। কৃষকদের মধ্যে বীজতলা তৈরির জন্য কৃষি কার্যালয় থেকে ২ হাজার ট্রে সরবরাহ করা হয়েছে।
বেশির ভাগ কৃষকই তাদের জমিতে বা বাড়ির পাশে ট্রের ওপরে বীজতলা তৈরি করেছেন। ট্রেতে উৎপাদন করা ধানের চারা কৃষি কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার মেশিন দিয়ে জমিতে লাগানো হবে। এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে ধানের চারা লাগানো। মেশিনে ধানের চারা লাগানোয় শ্রমিক তেমন লাগবে না বললেই চলে।
বেড়া কৃষি ক্লাবের সভাপতি এমআরএম ফিরোজ বলেন, সমলয় পদ্ধতির ধান চাষ কৃষকের জন্য বেশ লাভজনক হবে বলে বুঝতে পারছি। তবে ছাদে বীজতলা তৈরির চিন্তা-ভাবনাটি মূলত আমার। আমার উদ্যোগেই সমলয় পদ্ধতির কৃষকদের মধ্য গত বছরের সফলতার পথ ধরে এ বছর অন্তত ১৫ জন কৃষক ছাদে বীজতলা তৈরি করেছি। যাদের পাকা ভবনের ছাদের বাড়ি আছে তাদের জন্য এই পদ্ধতি অনেক সাশ্রয়ী ও লাভজনক।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরসাত কবীর বলেন, সমবায়ভিত্তিক সমলয় পদ্ধতির ধান চাষের ব্যাপারে কৃষকেরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গত বছর ৫০ জন কৃষক দিয়ে এই পদ্ধতির শুরু হলেও আগামীতে এই সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
এই পদ্ধতিতে বাড়ির ছাদ, উঠান বা পড়ে থাকা জায়গাতেও বীজতলা তৈরি করা যায়। তবে এমআরএম ফিরোজ ছাদে যে বীজতলা তৈরি করেছেন তা খুব ভালো হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি।