বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনে নেমে রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে যান সোহান শাহ (৩০) নামের এক যুবক। এ ঘটনায় তার মা সুফিয়া বেগম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা রামপুরা থানায় রেকর্ড করা হয়।
রামপুরা থানায় দায়ের হওয়া এ মামলা সূত্রে জানা যায়, মামলায় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। মামলার আসামির তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের আরও অনেক হেভিওয়েট নেতা।
এই মামলায় আসামি করা হয় ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’ নামের এক ব্যক্তিকে। এ নাম অনেকাংশে মিলে যায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিনের সঙ্গে। নতুন এই উপদেষ্টা শপথ নেওয়ার পর থেকে তিনি সোহান হত্যা মামলার আসামি কি না তা নিয়ে নানা মহলে আলোচনা চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামের আংশিক মিল থাকলেও উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন ও মামলার তালিকায় থাকা শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া একই ব্যক্তি কি না তা নিশ্চিত নয় পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
এ বিষয়ে সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সোহান হত্যা মামলায় শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া নামে এক আসামি রয়েছে। এই নামের সঙ্গে উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নাম, তার বাবার নাম ও বাসার ঠিকানার আংশিক মিল রয়েছে। তবে আসামি যে ব্যক্তিকে করা হয়েছে তার পূর্ণ নাম শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া। ভূঁইয়া অংশটি নিয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে আসলে দুই জন একই ব্যক্তি কি না। এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ। তার গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি ভারগো গার্মেন্টস কারখানায় মেকানিক্যাল বিভাগের প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করতেন। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা সিএনজি স্টেশনের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন সোহান শাহ।
আরও জানা যায়, সেদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগসহ অন্যরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালায়। তখন সোহান শাহসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সোহান শাহকে স্থানীয় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হয়। তখন ওই হাসপাতালের মালিক ইমন ফরাজীর নির্দেশে (মামলার ১৯ নম্বর আসামি) তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। পরে সোহান শাহকে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই গত ২৪ আগস্ট তিনি মারা যান।
রামপুরা থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোহান শাহর মা সুফিয়া বেগম ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে সেই মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়েছে।