মোঃ সিফাত রানা চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ- চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হককে বক্তব্য দিতে না দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, চেয়ার ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কেউ হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরপার্কে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য বৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি এবং পতিত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় নেতাকর্মীরা জানায়, সমাবেশ চলাকালীন সময়ে শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আশরাফুল হককে বক্তব্য দিতে দেয়ার দাবি জানায় তার অনুসারীরা। কিন্তু তাকে বক্তব্য দিতে না দিয়ে সমাবেশের প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ শাহিন শওকতের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপরই মঞ্চ ও সভাস্থলে বাকবিতন্ডার জেরে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে শাহিন শওকত গ্রুপ ও আশরাফুল হক গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাংচুর করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে সভা পণ্ড হয়ে যায়। এসময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনের হস্তক্ষেপে পুনরায় সভার কার্যক্রম শুরু হয়। বিএনপি নেতা অ্যাড. সৈয়দ শাহিন শওকত বক্তব্য দেয়া শুরু করলে সমাবেশস্থলের পাশের সড়কে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানান, সাবেক সামরিক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। এসময় তিনি বলেন, আমি এমন পরিস্থিতির মুখে পড়িনি কখনো। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এমন বিশৃঙ্খলা আর না ঘটে সেবিষয়ে সচেতন থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানায়।
এবিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আশরাফুল হক বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগাঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম (চাইনিজ রফিক) সমাবেশে আমাকে বক্তব্য দিতে দেয়নি। এর প্রতিবাদ জানায় দলের নেতাকর্মীরা। এর জের ধরেই আমার কয়েকজন লোককে মারধর করা হয়৷ এমনকি এমন হামলার ঘটনায় আমরা সমাবেশস্থল ত্যাগ করলেও এনিয়ে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাননি উপস্থিত জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
তিনি আরও বলেন, আমরা সমাবেশস্থল ত্যাগ করার পর তারা নিজেরাই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এবিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগাঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামের (চাইনিজ রফিক) বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা ও অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক অ্যাড. সৈয়দ শাহিন শওকত বলেন, বক্তব্য দিতে না দেয়ার কারনে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আ.লীগের কিছু লোকজন নিয়ে এসে আশরাফুল হক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সমাবেশে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আশরাফুল হক একজন সন্ত্রাসী। তাকে এর আগেও একবার দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। সে বিএনপির কেউ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইস উদ্দীন বিএনপির সমাবেশস্থলে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা অস্বীকার করেন। তিনি জানান, ককটেল নয়, দুটি পটকার বিস্ফোরণ ঘটেছে।