দেশে এখন লোডশেডিং বাড়ছে, গরম বাড়লেই তীব্রতা বাড়ে লোডশেডিংয়ের । এর মাঝে বিদ্যুৎ বিতরণ সরঞ্জামাদি নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জরিয়ে পরেছে বগুড়ার শেরপুরের বিদ্যুতের দুই বিভাগ– নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি । এতে চরম ভোগান্তিতে পরেছে শেরপুর পৌর শহর ও আশপাশের এলাকার নেসকোর গ্রাহকরা । সামান্য ঝড় বৃষ্টিতেই ভেঙ্গে পড়ছে নেসকোর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যাবস্থা ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগে লোড শেডিং ১২% আর শেরপুর উপজেলায় ৫৫%। তুলনামূলক লোডশেডিং বেশি হওয়ায় জনজীবন চরম দুর্ভোগে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) বিদ্যুতের বরাদ্দ পাওয়ার চেয়ে কম ব্যবহার করতে বাধ্য হন। কারণ সরঞ্জাম কম থাকায় পল্লি-বিদ্যুৎ নেসককে নিয়ন্ত্রণ করে। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ কম পাওয়া অন্যদিকে নেসকোর পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় একরকম পল্লী বিদ্যুতের কাঁধে ভর করেই চলছে। এ কারনে নেসকোর গ্রাহকরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
নেসকো বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী:
শেরপুর উপজেলায় নেসকোর সঞ্চালন লাইন ১৫ কিলোমিটার। গ্রাহক সংখ্যা মোট ৪৮ হাজার। এখানে গ্রাহক চাহিদা ২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ । সেখানে বরাদ্দ পায় মাত্র ৮-১০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১টি বড় মিলকারখানা চলে। বে-ব্রেকার একটি হওয়ায় পুরো নেসকোর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে পল্লী বিদ্যুৎ।
পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী:
শেরপুর উপজেলা গ্রাহক সংখ্যা ৭৬ হাজার। এখানে গ্রাহক চাহিদা ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে বরাদ্দ পায় মাত্র ২৫-৩৫ মেগাওয়াট। পল্লী বিদ্যুতের ছোট বড় মিলে মিল-কারখানা চলে প্রায় ৫’শ টি।
তথ্য অনুযায়ী নেসকোর গ্রাহকের চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা, কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো। চরম ভোগান্তিতে রয়েছে শেরপুরের মতো একটি বানিজ্যিক শহরের (নেসকোর) গ্রাহকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নেসকো ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনের জন্য মাত্র ১টি ব্রেকার দিয়ে চলছে। নেসকো ২০২০ সাল পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুতের নিকট হতে মৌখিকভাবে আরেকটি বে-ব্রেকার নিয়ে মোট ২টি বে-ব্রেকার দিয়ে গ্রাহক সেবা দিয়ে আসছিল। এতে করে কিছুটা স্বস্তিতে চলছিল বিদ্যুৎ বিতরণ সেবা। ২০২০ সালে পল্লী বিদ্যুৎ তার ব্রেকারটি ফিরিয়ে নেওয়ায় বিপাকে পড়ে নেসকো।
নেসকো বারবার চিঠি পাঠিয়েও বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ-২ এর কাছ থেকে মিলছেনা কোন সারা। এতে নেসকোর গ্রাহকরা পরেছে চরম দুর্ভোগে । বছরের পর বছর গেলেও এর সুরাহা হচ্ছে না কোন পক্ষ থেকেই । তারপরও গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে নেসকোর স্থানীয় কর্মকর্তারা ।
আরো জানা যায় যে,
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিয়ন্ত্রিত বে-ব্রেকারের সংখ্যা মোট ৭ টি এর মধ্য দুই সেট ৩৩-কেডি ব্রেকার সম্পূর্ণ অব্যবহৃত পরে আছে । এবং নন্দিগ্রাম সাব-স্টেশনের একটি ব্রেকার উপযোগী থাকলেও তা ব্যাবহার করা হয় না । যদিও নেসকো পিএলসি’র শেরপুর দপ্তরের অনুকূলে ২ সেট ফিনিশড ব্রেকার বরাদ্দের সিদ্ধান্ত আছে এবং নেসকোর অনুকূলে দুই সেট ফিনিশড বে-ব্রেকার তৈরীর নির্মাণ খরচ বহনের জন্য পবিস-২, বগুড়া দপ্তরে ইতিমধ্যে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু পূর্বের দুই সেট ৩৩-কেভি বে-ব্রেকার অব্যবহৃত থাকার কারণে পিজিসিবি কর্তৃক বাস সম্প্রসারণ নির্মাণ কাজের ডিজাইন অনুমোদিত না হওয়ায় আরইবি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নতুন ব্রেকারের জন্য নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছেন না ।
উল্লখ্যে যে, গত ৩০ জুন ২০২৪ এ প্রধান কার্যালয়ে বাপবিবো এবং পিজিসিবি এর যৌথ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, উক্ত আলোচনায় প্রধান প্রকৌশলী, বাপবিবো (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), পিজিসিবি এবং প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), নেসকো সহ বর্ণিত তিনটি সংস্থার অন্যন্য সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সেই আলোচনা সভায় প্রধান প্রকৌশলী, বাপবিবো পবিস- ২ বগুড়া নিয়ন্ত্রিত মির্জাপুর-শেরপুর, বগুড়া ৩৩কেভি সুইচিং উপকেন্দ্র থেকে ১ টি ৩৩ কেভি বে-ব্রেকার সাময়িকভাবে বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ- শেরপুর, নেসকো পিএলসি’র ব্যবহারের সম্মতি প্রদান করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, বগুড়ার তিন উপজেলা ( শেরপুর, নন্দিগ্রাম, ধুনট) এর জন্য মোট বরাদ্দ আছে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ । এর মধ্য প্রায় ৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিয়ন্ত্রন করে এবং পিক আওয়ারে নেসকো পায় সর্বোচ্চ ১৮ মেগাওয়াট পায় বিদ্যুৎ। কিন্তু বিদ্যুতের সিংহভাগ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিয়ন্ত্রন করায় নেসকোর কপালে জোটে এভারেজে ৮ থেকে ১০ মেগাওয়াট ফলে লোডশেডিং কবলে পরতে হচ্ছে শেরপুরের নেসকোর গ্রাহকদের ।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও বিদ্যুতের বেশীরভাগ নিয়ন্ত্রন করায় পাশের জেলা সিরাজগঞ্জে বিদ্যুৎ বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে ।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল উপ-মহাপরিচালক প্রকৌশলী রথীন্দ্রনাথ বর্মন জানান, আমাদের অব্যবহৃত যে দুটি বে-ব্রেকার আছে। সেগুলো আমাদের কাজে লাগবে । তাই আমরা চাইলেও নেসকোকে দিতে পারি না। তারা নিজস্বভাবে তৈরি করে নিয়ে চালাতে পারেন।
শেরপুর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল (বিক্রয় ও বিতরণ) বিভাগ জানান, আমাদের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা একটি বে-ব্রেকার দিয়ে চলছে। পল্লী বিদ্যুতের ২টি ব্রেকার অব্যবহৃত আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি ব্রেকার পল্লী বিদ্যুৎ থেকে নেওয়ার জন্য তাদের একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোন কর্ণপাত করছেনা।