1. editor@dailybogratimes.com : dailybogratimes. :
বেনাপোলে পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে নিখোঁজ বাহাদুরপুরের তিন যুবক » Daily Bogra Times বগুড়া টাইমস
Logo বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ নির্ধারণের প্রস্তাব আমদানি হবে ৬ লাখ টন চাল ও গম, খাদ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে সরকার পিআইবির নতুন মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ কাজিপুরে আন্তঃশ্রেণি ফুটবলের ফাইনাল অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির নতুন পরিচালক ড. মুর্শিদা ফেরদৌস  ধামইরহাটে তালা ভেঙ্গে কাপড়ের দোকানে চুরির অভিযোগ মহাদেবপুরে নৃ-গোষ্ঠীর কারাম উৎসব পালিত রাজশাহীর উপজেলা ও পৌরসভায় সেবা পেতে জনগণের ভোগান্তি  জয়পুরহাট সরকারি কলেজের উদ্যোগে আন্তঃ বিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট শুভ উদ্বোধন বিস্ফোরণে কাপলো লেবানন : নিহত ৯, আহত ২৮০০ পশ্চিমবঙ্গে বন্যার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করলেন মমতা সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ আমরা বাংলাদেশকে সম্মান করি : গৌতম গম্ভীর অনলাইনেও দেখা যাবে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ আ.লীগ সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সব প্রকল্প বাতিল : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

বেনাপোলে পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে নিখোঁজ বাহাদুরপুরের তিন যুবক

মো:মনির হোসেন বেনাপোল প্রতিনিধি:-
  • শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১৩ বার পঠিত
বেনাপোলে পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে নিখোঁজ বাহাদুরপুরের তিন যুবক
print news

মো:মনির হোসেন বেনাপোল প্রতিনিধি:-যশোরের বেনাপোলে সংঘবদ্ধ চক্রের কবলে পড়ে পাচারের শিকার হচ্ছেন এলাকার যুবক-তরুণেরা। ইতিমধ্যে এদের দ্বারা ইটালিতে ভালো চাকরির প্রলোভনে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন একই এলাকার তিন যুবক। ইটালির কথা বলা হলেও তাদেরকে লিবিয়ায় নিয়ে যায় সেখানে আগে থেকে অবস্থানরত পাচারকারী চক্রের হোতা সোহাগ আলী। নিখোঁজ সন্তানদের হদিস না পেয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তবে, অভিযোগ রয়েছে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী এবং থানা পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেনা পরিবারের সদস্যরা।

পাচারকারী সোহাগ আলী বেনাপোল  বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ধান্যখোলা গ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি বেশ কয়েক বছর থেকে লিবিয়ায় প্রবাসী জীবনযাপন করছেন। সেখান থেকে তিনি মানব পাচারের চক্র পরিচালনা করেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। বাহাদুরপুরে তার কাজে সহায়তা করেন পিতা মফিজুর রহমান, মা মমতাজ বেগম এবং বোন রুমা খাতুন। তারা এলাকাবাসীকে প্রলোভন দেখাতে থাকেন যে, সোহাগের মাধ্যমে কেউ ইচ্ছা করলে ইটালিতে যেয়ে স্বপ্নের চাকরি করতে পারবেন। তাদের এই প্রলোভনের শিকার হয়েছেন একই ইউনিয়নের চার নম্বর ঘিবা গ্রামের আরশাদ আলীর ছেলে রানা হোসেন (২১), জব্বার আলীর ছেলে শাহীন আলী (২৩) এবং মশিয়ার রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন আগে থেকেই লিবিয়ায় অবস্থান করতেন। তাকে সেখান থেকে ইটালিতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি করায় পাচারকারীরা।

মা তানজিলা খাতুন জানান, রানা একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। চাকরিও করতেন বেনাপোলে একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অফিসে। সোহাগের পিতা, মা ও বোনের প্ররোচণায় তারা রানাকে ইটালিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। একইভাবে তানজিলার চাচা জব্বার আলীর ছেলে শাহীন আলমও যাওয়ার জন্যে রাজি হন। লিবিয়া থেকে ইটালিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তার চাচাতো ভাসুরের ছেলে আনোয়ার হোসেন। এজন্যে প্রত্যেকের কাছ থেকে আট লাখ করে টাকা নেয় সোহাগ আলী।

তানজিলা খাতুন এবং তার আর এক ছেলে রনি জানান, আট লাখ টাকার চার লাখ টাকা নিয়েছে সোহাগের পিতা, মা ও বোন। পাচারকারীদের কথামতো আরও চার লাখ টাকা ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করেছেন।

পাচারের শিকার আর এক যুবক আনোয়ার হোসেনের পিতা মশিয়ার রহমান ও মা পারভীনা খাতুন জানান, সোহাগের মাধ্যমে আনোয়ার লিবিয়ায় গেছে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই। সেসময় সোহাগকে তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করতে হয়েছে। সর্বশেষ লিবিয়া থেকে ইটালিতে পাঠানোর কথা বলে আরও তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা সোহাগ নিয়েছে ইসলামি ব্যাংকের মাধ্যমে।

রানা হোসেনের সাথে একই দিনে ইটালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শাহীন আলম। তার পিতা জব্বার আলী এবং মা নুরজাহান খাতুন জানান, অন্যরা যেভাবে টাকা দিয়েছেন তিনিও একইভাবে দিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রানা হোসেন এবং শাহীন আলম ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ ইটালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। তাদেরকে নিয়ে যান সোহাগের পিতা, মা এবং বোন। ওইদিনই তারা ঢাকা জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেন। কিন্তু, তাদেরকে ইটালিতে না পাঠিয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়।

পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর দুই মাস পর্যন্ত তারা সন্তানদের সাথে কথা বলতে পেরেছেন। এরপর তারা নিখোঁজ। সন্তানদের বেঁচে থানা না থাকা নিয়ে দিনরাত কেঁদেকেটে একাকার করছেন পরিবারের সদস্যরা। প্রথম প্রথম সোহাগ ওই যুবককেরা ভালো আছে জানালেও পরে বলে সে কিছু জানে না। ইটালির উদ্দেশ্যে বোটে উঠিয়ে দেওয়ার পর তাদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সোহাগ। সর্বশেষ সে ও তার পরিবারের সদস্যরা তিন যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সোহাগ, তার পিতা, মা ও বোন মিলে মানব পাচারের একটি চক্র চালান। দেশের অন্যান্য স্থানেও তাদের চক্রের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছে। এরা সাধারণ মানুষকে বিদেশে ভালো চাকরি দেওয়ার নাম করে পাচার করে। এরকম অভিযোগ নিয়ে মাঝেমধ্যে তাকে খুঁজতে বাইরে থেকে লোকজন আসেন।

নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের দাবি তারা রঘুনাথপুরের কবির, ঘিবার সুজন এবং ধান্যখোলার বক্ত মেম্বারকে সাথে নিয়ে সোহাগদের ধান্যখোলার বাড়িতে যান। এজন্যে তিন মেম্বার তাদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকাও নিয়েছেন। ওই বাড়িতে যাওয়ার পর তারা উল্টো কথা বলছেন। এমনকী বক্ত মেম্বার পিবিআইএর কাছে পাচারকারী সোহাগের পক্ষে কথা বলেছেন।

পরিবারগুলোর অভিযোগ তারা শার্শা থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ অনেক টাকা দাবি করে। সে কারণে রানা ও আনোয়ারের পরিবার মামলা করতে পারেননি।

শুধু শাহীন আলমের মা নুরজাহান খাতুন ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর যশোরের মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ ছেলে শাহীন আলমের (২৪) পাচারের অভিযোগে একটি পিটিশন দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেনশন (পিবিআই)কে প্রেরণ করে। পিবিআই যশোরের সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা জিয়া তাদেরকে একবার যশোরে ডেকেছিলেন। এছাড়া আর কোন অগ্রগতি হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, ঘটনা এমন দ্রুততার সাথে ঘটে গেছে যে, তারা সেভাবে কোনো প্রমাণ রাখতে পারেননি। ভিসা ও টিকিট করার জন্যে দুই যুবকের পাসপোর্ট রুমার কাছে দিয়ে এসেছিলেন। সেগুলো হাতে না পাওয়ায় তার ফটোকপি রাখতে পারেননি। কিন্ত, ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের তিন নম্বর ওয়ার্ডের (ঘিবা) মেম্বার সুজন উদ্দিন জানান, সোহাগ ও তার পরিবারের সদস্যরা তিন যুবককে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া এবং টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ মেলা’।

অভিযুক্ত সোহাগের বোন রুমা খাতুন গ্রামের কাগজের কাছে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যাদের কথা বলা হচ্ছে তাদের কাউকেই তারা চেনেন না।

পিবিআই যশোরের এসপি রেশমা শারমিন গ্রামের কাগজকে বলেছেন, ‘ইমিগ্রেশনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ছেলেটি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো একটি দেশে গেছে। আমরা লিবিয়ায় মেইল করেছি। দেশের পরিস্থিতির কারণে আর কোনো খোঁজ নেওয়া হয়নি। লিবিয়া থেকে ফিরতি কোনো মেইলও পাইনি। আশা করছি দ্রুত রিপোর্ট দিয়ে দেবো।’

মানবাধিকার সংস্থা রাইটস যশোরের তথ্যানুসন্ধান কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান বলেন, তাদের সংস্থার পক্ষ থেকে বোনো চান্স সুইস (BONO Direct Aid Association & Chance Swiss) এর অর্থায়নে শার্শা উপজেলার বাহাদুরপুর, বেনাপোল, ডিহি এবং লক্ষণপুর ইউনিয়নে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ধরনের একটি উঠান বৈঠক বাহাদুরপুরের চার নম্বর ঘিবা গ্রামে অনুষ্ঠিত করার সময় এলাকাবাসী তিন যুবক পাচারের বিষয়টি জানান। এ ধরনের অসংখ্য তথ্য তাদের কাছে আছে জানিয়ে তৌফিকুজ্জামান বলেন, অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এসব এলাকা থেকে বিদেশে চাকরির নামে মানব পাচারের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সেজন্যে মানুষকে পাচার বিষয়ে সচেতন করতে রাইটস যশোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।

এনাম হক / ডেইলি বগুড়া টাইমস

আরো খবর
© All rights reserved by Daily Bogra Times  © 2023
Theme Customized BY LatestNews