1. dailybogratimes@gmail.com : admin :
ভারত থেকে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি তারপরও কমছে না দাম - Daily Bogra Times
বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

ভারত থেকে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি তারপরও কমছে না দাম

মনির হোসেন,বেনাপোল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময়ঃ রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১১ Time View
ভারত থেকে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি তারপরও কমছে না দাম
print news

মনির হোসেন,বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় তিন মাসে ১৩ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। ভারত থেকে চাল আমদানি স্বাভাবিক থাকলে ও বেনাপোলসহ যশোরের বাজারগুলোতে কমছে না দাম। উল্টো স্থানীয় বাজারে গত সপ্তাহে প্রকার ভেদে চালের দাম আগের থেকে কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা করে বেড়েছে। এ অবস্থায় ভারত থেকে চাল আমদানির সময়সীমা আবারও বাড়ানো হয়েছে। আমদানির জন্য বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে চাল আমদানি করতে পারবেন।

গত ৫ ফেব্রয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেসরকারিভাবে নন-বাসমতি সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হলো।

চাল আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে চালের দাম বেশি থাকায় আমদানিকৃত চালের দাম বেশি পড়ছে। ফলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। এ অবস্থায় দাম কমার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না তারা।

ক্রেতারা বলছেন, দেশে বর্তমানে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। মাস খানেক আগে কৃষকের ঘরে উঠেছে আমন ধান। তারপরও সাধারণ মানুষকে বেশি দামেই চাল কিনতে হচ্ছে। এতে অনেকে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কম দামে চাল না কিনতে পেরে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সিন্ডিকেট গড়ে ওঠায় দাম কমছে না বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় দাম বাড়ছে বলে জানান ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, খেটে খাওয়া মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় স্বল্পআয়ের মানুষকে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন নিত্যপণ্যসহ বাড়ছে চালের দাম। প্রতি বাজারে এমন কোনও পণ্য নেই যে তার দাম বাড়েনি। 

আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রয়ারি তিন মাসে বেনাপোল দিয়ে ১৩ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। সরকার গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়। এ সময়ের মধ্যে আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে ফেব্রুয়ারি  ১৫ তারিখ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। তাতেও দেশের বাজারে চালের দাম না কমায় ভারত থেকে আমদানির জন্য আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত এক মাস সময় বাড়িয়েছে সরকার। আশা করা যায়, সামনে কমবে। আমদানিকারকদের ভাষ্যমতে, ভারতে চালের দাম বেশি। এ কারণে আমদানিকৃত চাল কম দামে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

চলতি মৌসুমে ধানের দাম বেশি, যে কারণে কমছে না চালের দাম এমনটাই বলছেন অটোরাইস মিল মালিক ও ধান ব্যবসায়ীরা। নাভারণ বাজারের সবচেয়ে বড় চালের আড়ত চৌধুরী রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী রাশেদ চৌধুরী বলেন, মোটা চাল ৫১ টাকা ও স্বর্ণা মোটা চাল ৫৩ টাকা কেজি পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে। নতুন ধানের চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। আমদানিও স্বাভাবিক রয়েছে। যদিও এবার অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন কমেছে। সে কারণে আমদানি চলমান থাকবে।

বেনাপোলসহ শার্শার কয়েকটি রাইস মিলে সরেজমিনে দেখা যায়, আশানুরূপ ধান কিনতে পারেননি মিল মালিকরা। দাম বাড়ার আশায় কৃষকরা ধান মজুদ রেখেছেন। তবে মিল মালিকরা অন্য জেলা থেকে ধান কিনে আনছেন। এসব ধান থেকে চাল করতে খরচ পড়ছে ৫০ টাকার ওপরে এবং চিকন চাল খরচ পড়ছে প্রায় ৬৩ টাকার মতো। এমনটিই বলছে মিল মালিকরা।

বেনাপোল বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে মোটা চাল ৫২, হীরা চাল ৪৮, উনপঞ্চাশ চাল ৫৬, আঠাশ ৫৯-৬০, জিরাশাইল ৭৬, মিনিকেট ৬৭, ইন্ডিয়ান মিনিকেট ৭৬, বাসমতি ৯৩-৯৫, পাইজাম ৫৭, স্বর্ণা ৫৪-৫৬ ও নাজিরশাইল ৮৩ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

বেনাপোল বাজারে চাল কিনতে আসা আব্দুল মান্নান বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ধানের মজুদ রয়েছে, আবার ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে। তারপরও দাম কমছে না কেন ? প্রতি বছর এই সময়ে নতুন ধান উঠলে বাজারে চালের দাম অনেক কমে আসে। কিন্তু এবার বাজারের চিত্র ভিন্ন। সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। 

আরেক চাল ক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, গেল মৌসুমে পর্যাপ্ত ধানের আবাদ হয়েছে। তারপরও দাম কমছে না। আমরা গরিব মানুষ। দাম না কমলে কীভাবে চলবো? হয়তো সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। তাই আমি মনে করি, প্রশাসন বাজারে নজরদারি বাড়ালে দাম অনেকটা কমে আসবে।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, আটটি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত ১৭ নভেম্বর থেকে ১৩ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। সারাদেশে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ৯২ প্রতিষ্ঠানকে। দুই লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ এবং এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তাদের। অনেক প্রতিষ্ঠান এই সময়ের মধ্যে আমদানি করতে পারেনি। সরকার ২৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয় আমদানিকৃত চাল বাজারজাত করার জন্য। পরে তা ১৫ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে ধীরগতিতে চলছে আমদানি। পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি না হওয়ায় আরও এক মাস সময় বাড়িয়েছে সরকার।

বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারি পরিচালক কাজী রতন বলেন, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রয়ারি তিন মাসে বেনাপোল দিয়ে ১৩ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন চাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি হয়েছে। যেহেতু চাল নিত্যপণ্য এবং দেশের বাজারে চাহিদা ব্যাপক, সেহেতু আমদানিকৃত চাল বন্দরে আসা মাত্রই আমরা দ্রুত  ছাড় করার ব্যবস্থা করছি। 

শেয়ার করুন

আরো খবর দেখুন
© All rights reserved © Daily Bogra Times/2025
Theme Customized BY LatestNews