অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন। আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হলো বিকাল ৫টায়। তবে অনেকে বলছেন, অন্যান্য আসরের তুলনায় এবার শিল্পী তথা ভোটারের উপস্থিতি কম। এর মধ্যেও ঢালিউডের জনপ্রিয় অনেক তারকাকেই দেখা গেলো তাদের প্রাণের আঙিনা এফডিসিতে আসতে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে।
এই নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে মিশা-ডিপজল প্যানেল থেকে লড়ছেন চিত্রনায়ক রুবেল। ভোট দিতে এবং নিতে এসে তিনি আক্ষেপের কথাই জানালেন। কারণ প্রবেশের সময় পুলিশি নিরাপত্তার কড়াকড়ি ব্যবস্থা পার হতে হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রুবেল বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমাদের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে। তবে আমি মনে করি, এটা মাত্র ৫-৭ দিনের জন্য। এরপর তো আবার ভাই-ব্রাদার। আমি ৭-৮ বার নির্বাচিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলাম। ৯০ সাল থেকে নির্বাচন করি। এভাবে প্রশাসনের পাহারায় নির্বাচন দেখি নাই। আমরা সবাই আনন্দ করতে করতেই ভোট দিয়েছি, ভোট চেয়েছি।’
ক্ষোভের সুরে রুবেল আরও বলেছেন, ‘নায়ক আলমগীর বা উজ্জ্বলের মতো লোককে যদি আইডি কার্ড শো করে ঢুকতে হয়, তাহলে দুঃখজনক। এক কথায় খুবই বাজে। এভাবে কার্ড চেক করে ঢোকানোর মানে ডেকে অপমান করা। এ রকম হলে আমি আর নির্বাচন করবো না।’
টেলিভিশন ও সিনেমার নন্দিত অভিনেতা এবং সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আগেও ভোট দিয়েছেন। এবার ভোট দিতে এসে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘নির্বাচনে ভোট দেওয়া আমার কর্তব্য। ভোট দিতে এসেছি, আমার পছন্দ অনুযায়ী শক্তিশালী প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব। শিল্পীদের যেটা প্রত্যাশা, আমারও প্রত্যাশা সেটাই। গতবছরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়, আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’
এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন একসময়ের আলোচিত নায়ক মাহমুদ কলি। ইতিবাচক ভাবনা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আনন্দঘন পরিবেশে, সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে যাতে ভোটগ্রহণ শেষ হয় এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আশা করছি চলচ্চিত্রের মানুষেরা সুচিন্তিত মতামত দিয়ে কলি-নিপুণ প্যানেলকে জয়যুক্ত করবে।’
মধ্যাহ্নের বিরতির পর বেলা পৌনে তিনটার দিকে ভোট দিতে আসেন ঢালিউডের কিংবদন্তি তিন বোন সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা। তাদের দেখে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে অন্যদের মনেও। গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ববিতা বলেন, ‘এফডিসিতে আসা বন্ধই করে দিয়েছিলাম। অনেক দিন পর আসলাম। আজকে সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, সে কারণেই আমার আসা। যারা সত্যিকারের অর্থে কাজ করবে, তাদেরকেই ভোট দেবো।’
সুচন্দার বক্তব্য এরকম, ‘আজকে অনেক আশা নিয়ে ভোট দিতে এসেছি। প্রত্যেকবারই আসি। এখন নতুন-পুরাতন সবাই মিলে নির্বাচনে নেমেছে এজন্যই আমার আসা। চলচ্চিত্রের মধ্যে আমাদের সমিতি গুরুত্বপূর্ণ সমিতি। শিল্পীদের ছাড়া আমাদের চলচ্চিত্র হয় না। তাই শিল্পীদের বিকল্প নেই। বক্তব্যে নয়, যারা সততার সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে তাদেরকেই আমরা ভোট দেব। যাতে আমাদের সংগঠন আরও সুন্দর হয়।’
চম্পা বলেছেন, ‘নতুন পুরাতন যারাই নির্বাচন করছে, প্রত্যেকে আমার প্রিয়। শিল্পী শব্দটা ভীষণভাবে আমাদের পরিবারের মনে হয়। তাই আমি মনে করি, আমরা সবাই মিলে এক। সবাই মিলে যদি এগিয়ে যেতে পারতাম, তাহলে আমাদের শিল্পটাকে অনেক এগিয়ে নিতে পারতাম।’
দীর্ঘ দিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন চিত্রনায়ক কাজী মারুফ। ফলে ভোট দিতে আসা হয় না তেমন। এবারের ঈদে দেশে তার নতুন ছবি ‘গ্রিন কার্ড’ মুক্তি পেয়েছে। সেই সুবাদে আছেন ঢাকায়; হাজির হয়েছেন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে। অতঃপর বললেন, ‘অনেক সুন্দর পরিবেশে ভোট হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে এমন পরিস্থিতি দেখে। মনে হচ্ছে আমরা সবাই এখানে আছি। এটি একটি উৎসব।’
এই নির্বাচনে মিশা সওদাগরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন খলঅভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। কিন্তু নির্বাচনের আগের দিনই (১৮ এপ্রিল) বিপরীত প্যানেল (কলি-নিপুণ) অভিযোগ তোলে, ভোটারদের টাকা দিচ্ছেন ডিপজল!
এ বিষয়ে ভোট দিতে-নিতে এসে ডিপজল বলেন, ‘টাকা আমরা দিয়েছি, নাকি ওনারা দিয়েছে, সেটার ফুটেজ অনেকের কাছে আছে। এসব অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বানানো। আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
উল্লেখ্য, এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ৫৭০। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন খোরশেদ আলম খসরু। শিল্পী সমিতির ১০টি পদের জন্য দুই প্যানেলে ২১ জন করে ৪২ জন তারকা-শিল্পী প্রার্থী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি কার মুখে ফোটে, তা জানা যাবে ভোট গণনা শেষে, রাতে।