হারুন, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে উত্তরের পাঁচ জেলায় চলমান লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) অবস্থান কর্মসূচীর দিন সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও রংপুরের তিস্তাপাড়ের ১১টি পয়েন্টে আন্দোলনকারীরা একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন করেন। ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’— এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে আয়োজিত কর্মসূচিতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। মশাল হাতে তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সুন্দরগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী লিপি আকতার বলেন, ‘তিস্তা শুধু আমাদের নদী নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। আমরা যারা শিক্ষার্থী, তাদের ভবিষ্যৎও এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। তিস্তা ধ্বংস হলে আমাদের গ্রামগুলোও হারিয়ে যাবে। আজ আমরা মশাল জ্বালিয়ে সরকারকে বলতে চাই—আর দেরি নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।’
ব্যবসায়ী মতিউর রহমান বলেন, ‘তিস্তার পানি না থাকলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষিপণ্য উৎপাদন কমে গেলে বাজারে সংকট দেখা দেয়, মানুষের আয় কমে যায়। আজ আমরা মশাল জ্বালিয়ে জানিয়ে দিলাম—এই নদী আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত, আমরা একে মরতে দেব না।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘তিস্তার সংকট উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি ও পরিবেশের সংকট। আজকের এই মশাল প্রজ্জ্বলন আমাদের ক্ষোভের প্রতীক। আমরা চাই, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিক, নইলে এই আন্দোলন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়বে।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ বলেন, ‘তিস্তা রক্ষা করা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আজকের এই মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি সরকারের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া উত্তরবঙ্গের মানুষ চুপ করে থাকবে না। সরকার যদি দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আমরা আরও কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।’
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতির ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক বলেন, ‘তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের অংশ। আজ আমরা মশাল হাতে সরকারের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছি— তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে, নইলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।’
মশাল প্রজ্জ্বলনের সময় আন্দোলনকারীরা জানান, তারা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আগামীতেও বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে আয়োজকরা জানান।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে উত্তরের পাঁচ জেলার ১১ স্থানে পালিত হচ্ছে অবস্থান কর্মসূচি। তিস্তাপাড়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। আয়োজকদের দাবি, সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত হয়। বিশেষ করে মশাল প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা সরকারের প্রতি শক্ত বার্তা দিয়েছেন যে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া এই আন্দোলন থামবে না।