মার্কিন হুমকির প্রতিক্রিয়া, ইরানের সঙ্গে সামরিক-প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চায় চীন।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার কাঠামোর মধ্যে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার দুই নতুন সদস্য হিসেবে ইরান ও বেলারুশের সাথে সামরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের জন্য তার দেশের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে বেইজিং সবসময় আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসনের বিষয়টিকে সমর্থন করে।
তিনি এও বলেন, সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা তৃতীয় কোনও দেশের বিরুদ্ধে নয়।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে কোনও উচ্চপদস্থ চীনা কর্মকর্তার মন্তব্য করার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। তা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে এই প্রথম বেইজিং সরকারের উচ্চপদস্থ কোনও কর্মকর্তা সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার কাঠামোর মধ্যে ইরানের সঙ্গে সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়ায় বিষয়টির গুরুত্ব অনেক বেড়েছে।
সম্প্রতি চীন ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন হুমকির পর চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এ বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে অনেকে মনে করছেন। ইরানের সামরিক সক্ষমতার ব্যাপারে চীনা বিশেষজ্ঞ শিয়াওয়াইহ সম্প্রতি বলেছেন, ইরান বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সাবমেরিন ইউনিটগুলোর অধিকারী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরে রাশিয়া ও চীনের সামরিক শক্তির ব্যাপারে অসন্তুোষ প্রকাশ করে ওই দুটি স্বাধীন দেশকে হুমকি দিয়ে আসছে। এমনকি সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্য ইউরোপে যুদ্ধ বহর পাঠিয়ে চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে হুমকিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এল আমেরিকা। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের কর্মকর্তারা মার্কিন হুমকির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ইরানের সাথে নিরাপত্তা ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বললেন।
এ বিষয়ে রুশ সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যাডমিরাল ইগর কোস্টিউকভ বলেছেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করে আমেরিকা রাশিয়া ও চীনকে নিবৃত্ত করতে এবং এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়।
তিনি বিশ্বের জটিল রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “হোয়াইট হাউস প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অস্ত্র দিয়ে ছেয়ে ফেলছে।”
গবেষণায় দেখা গেছে যে গত সাত বছরে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে সম্পাদিত অস্ত্র চুক্তির মোট মূল্য আট হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে এবং বর্তমানে মার্কিন মোট অস্ত্র রফতানির ৩৬ শতাংশেরও বেশি এই অঞ্চলে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল অপেক্ষাকৃত শান্তিতে রয়েছে, সেখানে হোয়াইট হাউসের রাজনীতিবিদরা অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরির চেষ্টা করছেন। যেমন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে উৎসাহিত করেছে আমেরিকা। এছাড়া, আমেরিকা তাইওয়ান ও জাপানকে উস্কে দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ অবস্থায় ইরানের সাথে সামরিক সহযোগিতা জোরদারে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। আর এটাও স্পষ্ট যে ইরানের সাথে চীনের সামরিক সহযোগিতার ফলে দেশটির সামরিক শক্তি ক্রমশ বাড়বে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মার্কিনীদের উৎখাতের ভিত্তি তৈরি করবে। সূত্র: তেহরান টাইমস, ইরনা, সিএনএন