লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সিসি টিভির ক্যামরা দেখে মামলার প্রধান আসামি জেহাদীর দুই সহযোগী দেওয়ান ফয়সাল ও আলমগীর নামে দুইজনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত জোড়া খুনে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানালেন পুলিশ সুপার। রবিবার দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান তিনি।/ এছাড়া প্রধান আসামিকে খুঁজে বের করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের একটি টিম গঠন করে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও জানান পুলিশ সুপার। নিহত স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জেহাদী মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদী এখনো অধরা রয়েছে। এতে শঙ্কা কাটছে না তাদের।
এদিকে রাজনৈতিক নেতাদের হারিয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা খুনিদের গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সচেতন মহল বলছেন, বিচারহীনতার কারণে বাড়ছে অপরাধ, সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার পরামর্শ জানান তারা।
জানা যায়, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জেহাদী কর্তৃক হুমকির কিছুদিন পরই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ইস্যু ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।/মঙ্গলবার জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করার পর পুরো জেলা জুড়ে মানুষের কৌতূহল যেন কাটছে না। সর্বত্র খুন আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ। জোড়া খুনের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদীকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জেহাদীকে হারিয়ে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে (২০২১ এর ডিসেম্বের) চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী মাহফুজুর রহমান। নোমান-রাকিবের বন্ধুত্বে ইউপি নির্বাচনে ভাইয়ের পক্ষে কাজ করা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে জোড়া খুনের ঘটনা বলে দাবি স্বজনদের। এর আগে অভিযুক্ত জেহাদী তাদের দু’জনকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন বলে দাবি তাদের।
এদিকে ঘটনার পর ঘটনাস্থল এলাকার একটি সিসি টিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ৮ জনকে অস্ত্র হাতে হেঁটে যেতে দেখা যায়।/ যে ভিডিওতে জেহাদীর অনুসারীরাই রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তার অনুসারী হিসেবে ফুটেজ দেখে ইতিমধ্যে রামগঞ্জে স্বেচ্ছাসেববক লীগ এর যুগ্ম আহবায়ক ফয়সাল দেওয়ান ও উত্তর জয়পুরেরর আওয়ামী লীগ কর্মী আলমগীর ওরফে টাকলু আলমগীরকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এছাড়া আরো কয়েকটি খুনে জেহাদীর হাত ও তার দেড় শতাধিক বাহিনী নানা অপরাধে জড়িত থাকলেও রহস্যজনক ক্ষমতায় বিচারহীনতায় ভুগছে বলে ভুক্তভোগীসহ আলোচনায় উঠে আসছে।
এদিকে জোড়া খুনের ঘটনার পর দলীয় নেতা-কর্মীরা খুনিদের গ্রেফতারের দাবীতে বিক্ষোভ ও মামনববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তারা অস্ত্রধারী-সকল খুনিদের ফাঁসির দাবী জানিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিচার দাবি করেন স্বজনরাও।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আল মাহমুদ বলেন, হত্যাসহ যে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে স্বাক্ষী ও ভিকটিম পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে বিচারহীনতার সংস্কৃতির মুখামুখি হবে না ভুক্তভোগী পরিবার। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানান, জোড়া খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে ফারুক হোসেন নামে আরেকজনকে আটক করা হয়েছে। /আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারী, মো. সবুজ, মনির হোসেন রুবেল ও আজিজুল ইসলাম বাবলুকে ৪ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রধান আসামিসহ অন্যদের খুঁজজে পুলিশ। খুব শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।