নিউজ ডেস্কঃ- রাজবাড়ীতে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজের। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া বেশ অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার পাচটি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে কালো সোনার সাদা ফুল। আর এই সাদা ফুলের কদমেই লুকিয়ে রয়েছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। ‘কালো সোনা’ খ্যাত পিয়াজ বীজ।
বাংলাদেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রাজবাড়ী জেলার অবস্থান। দেশে উৎপাদিত মোট পেঁয়াজের ১৪ শতাংশ উৎপাদন হয় রাজবাড়ীতে। এ জেলায় পেঁয়াজ আবাদের পাশাপাশি কদম পেঁয়াজ বীজের আবাদও হয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে।
পেঁয়াজ আবাদে যে পরিমাণ বীজ প্রয়োজন তার অধিকাংশ বীজ জেলাতেই উৎপাদিত হয়ে থাকে। উৎপাদিত এসব বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। বেশি দাম হওয়ায় পেঁয়াজের এ বীজকে চাষি ও কৃষি অধিদপ্তর ‘কালো সোনা’ বলে ডাকেন।
চাষিরা বলছেন, আবহাওয়া ভালো হলে খরচ বাদে এই পেয়াজের বীজ চাষে লাভ হয় দ্বিগুণেরও বেশি, তাই এগুলো ‘কালো সোনা’ নামে খ্যাতি পেয়েছে। তাই কৃষকরা ‘কালো সোনা’ চাষে স্বপ্ন দেখছেন। এ বীজ আবাদ করে চাষিরা অন্যান্য ফসলের চাইতে অধিক পরিমাণে লাভবান হয়ে থাকেন।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুসারে, রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলা, পাংশা, বালিয়াকান্দি, কালুখালী ও গোয়ালন্দে পেঁয়াজ বীজের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে জেলা সদর, পাংশা ও কালুখালী উপজেলাতে কদমের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। চলতি বছর রাজবাড়ী সদরে ৪২ হেক্টর,পাংশা উপজেলায় ৪৪ হেক্টর, কালুখালী উপজেলায় ৪২ হেক্টর,বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের কদমের আবাদ হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে পাংশা উপজেলার যশাই গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে পেঁয়াজ বীজের সাদা ফুল। শেষ সময়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা।
পাংশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার বোস বলেন, পেঁয়াজ বীজের গাছে শক্তি যোগানোর জন্য অনেকে কীটনাশক স্প্রে করছেন। মৌমাছি সংকট থাকায় অনেক কৃষক আবার হাত দিয়েই পেঁয়াজ ফুলের ‘মধু ফেলা’র কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত রোপন করা পেঁয়াজ বীজ গাছের ফলন ভালো হওয়ায় লাভের স্বপ্ন বুনছেন তারা।
পেঁয়াজের কদম প্রথমে সাদা দেখতে হলেও পরে কালো রংয়ে ধারন করেন। প্রতি কেজি বীজ চলতি বছর প্রায় সোনার দামে আট হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়েছে বলে কৃষকেরা পেঁয়াজের বীজ কে আদর করে ‘কালো সোনা’ বলে ডাকে। তবে এ মৌসুমে প্রচণ্ড গরমে ক্ষেতে মৌমাছির সংকট দেখা দিয়েছে। আর মৌমাছির না থাকায় পিয়াজের ফুলের পরাগায়ন কম হওয়ায় বীজ উৎপাদনে ঘাটতির শঙ্কা দেখা দেবে বলে কৃষকরা আশংকা করছেন।
জেলায় চলতি মৌসুমে ১৪৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের কদমের চাষাবাদ হয়েছে। আর ১৪৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হবে ৭০ মেট্রিক টন। এ পরিমাণ পেঁয়াজের বীজের বাজার মূল্য ৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারনের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান,চলতি মৌসুমে জেলায় ১৪৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ করা হয়েছে। রাজবাড়ীতে মূলত তাহের পুরী, কিং ব্যান্ড ও বারী-৪ জাতের পিঁয়াজ দানা আবাদ করা হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এবার জেলায় দেড় হাজার কৃষক পেয়াজ বীজ আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ফলনও ভালো হবে। এতে করে লাভবান হবেন চাষিরা।