মো: সাকিবুল ইসলাম স্বাধীন, রাজশাহী: রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করার জেরে বিএনপি’র দু-গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, বোমা বিস্ফোরকসহ সাংবাদিকের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যায় শুরু হওয়া সংঘর্ষ চলে টানা ৫ ঘন্টা, অর্থাৎ রাত ১১ টা পর্যন্ত চলে।
গতকাল শুক্রবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর দরিখড়বোনা রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষ বাঁধে। বিএনপি’র দু-গ্রুপের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে।
আহতরা হলেন, নগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটিরসবি) ওয়াচার সদস্য তোফাজ্জল হোসেন, দড়িখড়বোনা এলাকার রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লাভলী খাতুন, তাঁর আড়াই বছর বয়সী শিশুকন্যা লামিয়া, পথচারী রেলওয়ের কর্মচারী মো. রনি ও নাম না জানা অজ্ঞাত এক পথচারী। তারা সবাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পথচারী রনি ও সিটিএসবি সদস্য ইটের আঘাতে আহত হয়। তবে অপর পথচারী চাকুর আঘাতে আহত হন। বিএনপির নেত্রী লাভলীর বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় তাঁর শিশু কন্যাসহ তিনি আহত হয়েছে ।
হাসপাতাল থেকে ফিরে লাভলী জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনার মূল হোতা ইয়াহিয়া মিলু। তিনি যুবলীগ নেতা তোরিদ আল মাসুদ রনি’র ব্যবসায়ীক পার্টনার। তার ভাতিজার কথা অমান্য করে যুবলীগ নেতা সাব্বিরকে আটক করানো অপরাধে আর লীগের নেতাদের বাঁচাতে পেছন থেকে টাকা ও ইন্দন দুটো দিয়েছে মিলু। টাকার অফার আমকেও দিয়েছিল যা প্রত্যাখান করায় মিলুর আদেশে তার ভাতিজা জীবন এ সংঘর্ষ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে। নগরীর উপশহর এলাকায় থাকতেন মেয়র লিটন ও তাঁর যুবলীগ ক্যাড়ার তোহিদ আল মাসুদ রনি সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। ৫ আগস্টের পর রনিসহ যুবলীগ নেতাদের আশ্রয় দাতা ইয়াহিয়া মিলু। রনির ব্যবসায়ীক পার্টনার মিলু যুবলীগ নেতা কর্মীদের সেল্টারের দ্বায়িত্ব নেন। এদের মধ্যের মহানগর আ,লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ফ্ল্যাটে অভিযান করাই যার ফলে তার ভাই সাব্বিরকে আটকের ঘটনায় এ সংঘর্ষের মূল কারণ। যুবলীগ নেতা রনি’র পাওয়ার অফ এটনি নিয়ে কাজ করা ইয়াহিয়া মিলু নানাভাবে যুবলীগ ও তার সহযোগীদের সাহায্য করছেন। যুবলীগের সাথে ৫ আগষ্টের পরও মিলুর যোগসূত্র এই বিষয়ে ৫ আগষ্টের পর সংবাদ প্রকাশও হয়েছে যা দেখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে দুদক অভিযান করে মিলুর ফাইল জব্দ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবলীগ নেতা সাব্বিরকে আটক করা নিয়ে লাভলীর বাড়িতে হামলা চালায় মারুফ হোসেন জীবনের কিছু লোকজন সাথে আরও ছিল তাদের চিনিনা। এ ঘটনায় লাভলীর বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। এসময় আশের পাশের বিএনপি বা প্রশাসনের কারো কোনো সহযোগিতা পায়নি ওই নেত্রী। পরে লাভলীর ফোনের কিছু ছাত্র সমন্বয়ক ও তাদের সহকর্মী সহ জামাত শিবিরের লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আ.লীগের নেতা আটকের দোষে লাভলীর বাসায় হামলায় ক্ষিপ্ত হয়ে জীবনের চেম্বারে হামলা চালিয়েছে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। প্রশাসনের ব্যর্থতায় ঘটনা গড়াতে থাকে।
ঘটনার বিবরণে স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মহিলা দল নেত্রী লাভলীসহ তার অনুসারী ও ছাত্র সমন্বয়ক একত্রে কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন। এই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ থাকেন নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যাটারি বাবু ও তার ভাই সাব্বির বাবুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ইয়াহিয়া মিলু ওই নেতাদের বাঁচাতে ঘটনাস্থলে তাঁর ভাতিজা মারুফ হোসেন জীবনকে পাঠায় ।বর্তমানে মিলুর কথাতেই এখন এলাকা চলে ৷ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার জন্য মারুফ হোসেন জীবন এসে ৫ লাখ টাকা অফার করেন লাভলীকে। লাভলী রাজি না হয়ে প্রশাসনকে জানানোতে রাত সাড়ে ১১টার যৌথ বাহিনী ওই ভবনে অভিযান দেই। ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় প্রবেশকারী হিসেবে মোস্তাকের নাম দেখা যায়। এছাড়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও মোস্তাককে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে ভবনে ঢুকতে দেখা যায়। তবুও মোস্তাক আহমেদকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভবনটি খুঁজতে থাকে। পরে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু মোস্তাকের নাগাল পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসী আরও জানিয়েছে, আ.লীগের নেতাকে আটকের অপরাধে লাভলীর বাসায় হামলার খবর ছড়িয়ে পরাই রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকার বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সহ জাতীয়তাবাদী অনুসারীরা একত্রে হয়ে দড়িখড়বোনা রেল লাইনের পাশে জীবনের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাংচুর করেন। ওই চেম্বারটি বিগত সময়ে যুবলীগ নেতা রনি’র ছিল। তখন মিলু ও জীবন বাহিনী এগিয়ে আসলে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। টানা ৫ ঘন্টা চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ওই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকা পর্যন্ত। আতংক ছড়িয়ে পড়ে গোটা শহরে। ধারালো অস্ত্রে জ্বনজনানি, বোমা বিস্ফোরন, গাড়ি ভাংচুর অগ্নিসংযোগে রনক্ষেত্র তৈরি হয় এলাকাটি। অনেক পরে সেনাবাহিনী উপস্থিত হলে ডিবি ও পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে একত্রে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
এ বিষয়ে আরএমপি পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, তারা নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পুলিশের এক সদস্য আ হত হয়েছেন। থানায় কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।