ডিমলা (নীলফামারী)ঃ উপজেলার ছোট একটি গ্রাম সুপারিটারী মেম্বারপাড়া। সেখানে ২০০টির মতো পরিবার বসবাস করে। তবে গ্রামটিতে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। আর যা আছে তা ভাঙ্গাচুরা ও খানা-খন্দেভরা চলাচলের অনুপযোগী। তাই বাধ্য হয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির আইল দিয়ে হাটবাজার ও জেলা-উপজেলা শহরে আসা-যাওয়া করে আসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বর্ষাকালে গ্রামটির চারপাশে তিস্তা নদীর পানি থৈ থৈ করে। তখন নৌকা অথবা ভেলা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারে না কেউ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে হয় স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী ও কিন্ডারগার্ডেনের শিশু শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় গ্রামের বাসিন্দারা তাদের প্রাপ্ত বয়সি ছেলে-মেয়েদের ভালো কোনো পরিবারে বিয়েও দিতে পারছেন না।
অসহায় এই গ্রামটির অবস্থান নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুর্ভোগের এসব তথ্য জানা গেছে। গ্রামবাসির দাবি, গ্রামে প্রবেশের জন্য মাত্র ২০০ মিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে দিলেই ভয়াবহ এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন তারা।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ীবাঁধ থেকে তিস্তা নদীর পাড় পর্যন্ত কাঁচা এ রাস্তাটি দিয়ে আশপাশের কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত চলাচল করেন। এমনকি তিস্তা নদীর ওই পাড়ের মানুষজনও চলাচল করেন এই রাস্তা দিয়ে। গত কয়েক বছরের বন্যায় সরকারি এই রাস্তাটি ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। দীর্ঘদিনে এক কোদাল মাটিও পড়েনি এখানে। প্রত্যেক বছর নদীর বন্যার পানি ও বর্ষা মৌসুম এলেই বৃষ্টিতে কাঁদামাটি জমে এই গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ কারণে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতেও চায় না কেউ এই গ্রামে। গ্রামবাসি বারবার দাবি জানানোর পরও রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। এতে গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি দেখে মনে হয় হালচাষ করার জমি। কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচলে এলাকাবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীসহ শিশুশিক্ষার্থী ও পথচারী এবং মসজিদের মুসল্লিদের চলাচলে দুর্ভোগের শেষ নেই।
কথা হয় স্থানীয় গ্রামবাসির সঙ্গে। তারা ক্ষোভের সঙ্গে কালবেলাকে বলেন, এমপি ও চেয়ারম্যান নির্বাচনের সময় বড় বড় কথা বলে যান। নির্বাচন পার হলে তারা আর এলাকায় আসেন না। আমরা এ এলাকার মানুষ কি অপরাধ করেছি জানি না? যার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে! গ্রামের রাস্তার এমন বেহাল দশা যে বর্ষা মৌসুমে আমরা ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি না। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। এমনকি এ এলাকার ছেলেমেয়েদের কেউ বিয়েও করতে চায় না, দিতেও চায়না। বর্ষার সময় আমরা কৃষি পণ্য বাজারে বিক্রি করতে পারি না। সময়মতো বাজার করতেও পারি না। এক কথায়— সব দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে আমাদের এলাকার এ গ্রামটি।
সুপারিটারী মেম্বার পাড়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রজব আলী, সোলেমান আলী, সেলিম রেজা, জাহাঙ্গীর আলম ও ফাতেমা আক্তারসহ আরো অনেকে কালবেলাকে বলেন, আমাদের ছোট এই গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের হাজারেরও বেশি সদস্য বসবাস করে। গ্রামে শতভাগ বিদ্যুৎ আছে। তবে গ্রামে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকায় আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। একটু বৃষ্টি হলেই প্রতিদিন কাঁদামাটি পাড়ি দিয়ে হাট-বাজার ও উপজেলায় যেতে হয়। এ ছাড়া গ্রামে শতাধিক স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থী রয়েছে। তারাও অনেক কষ্ট করে স্কুল-মাদরাসায় যাতায়াত করে। মুসল্লিগণ কষ্ট করে মসজিদে যায়।
তারা আরো বলেন, এমন অবস্থায় বিশেষ করে গ্রামের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে বা কোনো গর্ভবতী নারীর সমস্যা হলে দ্রুত যে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাব, সেই সুযোগও নেই। রাস্তা না থাকায় শুধু দুর্ভোগ পোহাতেই হচ্ছে না আমাদের, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়া নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কেউ আমাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে চায় না। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের গ্রামের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তাটি দ্রুত নির্মাণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
গয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, রাস্তাটির অস্তিত্ব না থাকায় সুপারিটারী মেম্বারপাড়া গ্রামের মানুষজন একরকম গৃহবন্দি। তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা করে চেয়ারম্যান সাহেব কয়েকবার রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সম্ভব হয়নি।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, রাস্তাটি ওই এলাকার সর্বসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে।