আদমদীঘি(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ধানের মাঠে
ইতেমধ্যে প্রায় ৭০/৮০ ভাগ ইরি-বোরো ধান পেকেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটে পাকা ধান কাটতে না
পেরে হতাশ হয়ে পড়ে কৃষকরা। গত কয়েক দিনের প্রচন্ড তাপদাহ শেষে আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখে
আতংকিত হয়ে পড়ে শ’ শ’ কৃষক। ্ধসঢ়; উপজেলার কিছু স্থানে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে উত্তর জনপদ থেকে আসা আন্তঃনগর ট্রেনে সান্তাহার জংশন স্টেশনে আসতে শুরু করেছে
হাজারো ধানকাটা মৌসুমী শ্রমিক। এসব শ্রমিক কাউনিয়া,রংপুর, দিনাজপুর, গাইবন্ধা,ফুলবাড়ি
প্রভৃতি স্থানের বাসিন্দা। ৩/৪ সপ্তাহ ধানকাটা শেষে এসব মৌসুমী শ্রমিক তাদের এলাকায় ফিরে
যাবে। আদমদীঘির অনেক গৃহস্তের সাথে এসব মৌসুমী শ্রমিকদের মোবাইলে যোগাযোগ আছে।
যাদের আগে থেকে শ্রমিক ঠিক করা নেই সে সকল কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। শ্রমিকরা ট্রেন
থেকে নামা মাত্র অনেক কৃষক তাদের ধান কেটে নেয়ার জন্য শ্রমিকদের টানা-হেচড়া করে নিয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করছে।
ট্রেন থেকে নেমে আসা মৌসুমী শ্রমিক নেতা ডোমারের করিম উদ্দিন (৫৫) বলেন কামলা (শ্রমিক)
আসার এঅবস্থা আরো এক/দেড় সপ্তাহ ধরে চলবে। আবার এসব চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকরা ধান কাটা-মাড়াই করে
দিয়ে আগাম ফিরেও যাবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে পার্বতীপুর থেকে রাজশাহীগামী উত্তরা মেইল ট্রেনেও শ্রমিক আসতে শুরু করেছে। কিন্তু এদের প্রায় সকলে আগে থেকে কৃষকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকা শ্রমিক। প্রতিটি শ্রমিককে তিন বেলা খাবার ছাড়াও দিতে হচ্ছে ৬ থেকে ৭শ’ টাকা। তাতে প্রতি বিঘায় ধান কাটা-মাড়াইয়ের খরচ পড়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। ধান মিলছে ২০/২৪ মন হারে।
জানা গেছে, এবার বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছয় ইউনিয়ন ও এক পৌরসভা এলাকায় প্রায় সাড়ে ১২
হাজার হেক্টর জমিতে সরু আকারের জিরাশাইল, সম্পাকাটারি এবং বিআর-৯০ জাতের ইরি-বোরো ধান
চাষাবাদ করা হয়েছে। এসব জাতের ধানের মধ্যে জিরাশাইল এবং কাটারি ধানের প্রায় ৭০/৮০ ভাগ ধান
পেকে গেছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটে কৃষক ধান কাটা শুরু করতে পারেনি। এদিকে একটানা প্রায় তিন
সপ্তাহ ধরে তাপদাহ চলার পর বর্তমানে আকাশ মেঘলা দেখে আতংকিত হয়ে পড়েছে কৃষকরা।
উপজেলার সান্দিড়া গ্রামের কৃষক রমজান আলী জানান, আমরা আপাতত বৃষ্টি চাই না। আমাদের আবাদ
কাটতে হবে ,ূশুকাতে হবে,খড় শুকাতে হবে, ধান মাড়াই করতে হবে।বৃষ্টি.ঝড়, পাথর পড়লে আমাদের সর্বনাশ
হয়ে ডাবে। এ ছাড়া শ্রমিক সংকট তো আছে। এই ধান ঘড়ে না তোলা পর্যন্ত আমাদের শান্তি নাই।
উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দক্ষিন মালশন গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলীর সাথে এ প্রতিনিধির কথা
হলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, অনেক খরচ ও কষ্টে চাষাবাদ করা প্রধান ফসল ইরি বোরো ধান
মানুষ(শ্রমিক) অভাবে কাটতে পারছি না। আকাশের যা অবস্থা তাতে গতবারের মত প্রাকৃতিক
দুর্যোগ হলে আমাদের পথে বসতে হবে, বলেই আবেগ আল্পুত হয়ে চোখ মুছতে মুছতে তিনি চলে যান।
এঅবস্থা ও কথা শুধু মোহাম্মদ আলীর নয়, সকল কৃষকের। ইরি-বোরো ধান কাটা-মাড়াই মৌসুমের এ এক
বড় কষ্টগাঁথা।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, উপজেলার প্রায় ৭০/৮০ ভাগ বোরো
ধান পেকে গেছে। ধান কাট্ধাসঢ়;ও শুরু হয়েছে। আমরা কৃষক ভাইদের বলেছি, ধান ৮০ শতাংশ কাটলেই ধান
কাটতে। ইতিমধ্যে ৬০ হেক্টর ধান কাটা শেষ হয়েছে। শ্রমিক যোগাড় হলেই এ ধান ঘরে তুলতে হবে। এ
বারের বোরো আবাদ ভাল হয়েছে।