সমবায় সমিতির নামে আমানত সংগ্রহ আদমদীঘিতে আমানত ফেরত পেতে ইউএনও কার্যালয়ে গ্রাহকদের ভীড়
আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার আদমদীঘিতে উত্তরণ কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী সমবায়
সমিতি লিমিটেড নামের একটি সমবায় সমিতি গ্রাহকদের নিকট থেকে মোটা অংকের
মুনাফা দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া
গেছে । ভাল মুনাফা পাওয়ার আশায় উপজেলার শাওইল বাজার ও আশপাশের গ্রামের কয়েক’শ মানুষ ওই
সমিতিতে টাকা আমানত রাখে । মাসের পর মাস আমানত কারিদের মুনাফা প্রদান বন্ধ ও মুল
আমানতের টাকা ফেরৎ না দেওয়ায় প্রায় দুই শতাধিক মানুষ বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী
অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে টাকা ফেরৎ পাওয়ার আবেদন করেন । তাৎক্ষিানক ভাবে ৪১ জন
গ্রাহক এক কোট ১০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করেন ।
এর আগে গত আগষ্ট মাসের ২৮ তারিখে ওই সমিতির গ্রাহক উপজেলার মঙ্গলপুর গ্রামের নাঈম
হোসেন ১০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ফেরৎ পাওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন
করেন । বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার শুনানীর দিন ধার্য্য ছিল । শুনানীর সংবাদ পেয়ে এ দিন সকাল
থেকে কয়েক’শ গ্রাহক ইউএনও’র কার্যালয়ে এসে ভীড় জমায় ।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার শাওইল বাজারের মো. মুকুল হোসেন, মোখলেসুর
রহমান,মোকাদ্দেস হোসেন,মোস্তফা কামাল ও মোকাররম হোসেন পাঁচ ভাই মিলে ২০১৫ সালে
উত্তরণ কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সমবায় সমিতি
প্রতিষ্ঠা করেন । এই সমিতির সভাপতি,সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে এই পাঁচ ভাই থাকেন ।
সমিতির প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষের নিকট থেকে মোটা অংকের
মুনাফা দেয়ার নাম করে আমানত সংগ্রহ শুরু করে । তাঁরা প্রতি মাসের এক লাখ টাকা
আমানতের বিপরীতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেয়া শুরু করলে এলাকার মানুষ মুনাফা
প্রদান দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ সরল বিশ্বাসে নীচে পাঁচ লাখ থেকে উর্ধে ২০ লাখ
টাকা পর্যন্ত আমানত রাখেন । অল্প দিনের মধ্যে এই সমিতি কয়েক কোটি টাকা আমানত
সংগ্রহ করে ।
গত বুধবার শাওইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ ভাই মিলে ওই বাজারে পাঁচতলা বিশিষ্ট বিশাল
অট্রালিকা তৈরী করে সেখানে তাঁদের কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছে । কিন্তু কয়েক মাস ধরে
বন্ধ রয়েছে অফিসের সকল কার্যক্রম । ভবনের নীচ তলায় গিফট কর্ণার নামের একটি বিশাল দোকান
করা হয়েছে । নাম প্রকাশ না করে দোকানের তিন কর্মচারি বলেন,তারাও প্রতারনার শিকার । কয়েক
মাস ধরে তাঁদের বেতন দিচ্ছেন না মালিক পক্ষ । সেখান থেকে সমিতির সাধারন সম্পাদক
মোকাদ্দেস হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেন নি । পরে ওই
বাজারে গিয়ে দেখা হয় অসংখ্য গ্রাহকের সাথে । দেউরা গ্রামের গ্রাহক প্রকাশ চন্দ্র বলেন,
তিনি সমিতিতে ১১ লাখ টাকা রেখেছেন । এখন তাঁকে মুনাফা বা মুল টাকা কোনটাই ফেরৎ
দেওয়া হচ্ছে না । টাকা চাইলে তাঁরা ভয়ভীতি দেখায় । শ্ধাসঢ়;ওইল বাজারের শামসুদ্দিন বলেন,তিনি
মোট ১৪ লাখ টাকা রেখেছেন । সমিতির মালিকরা আমার নিকটজন এ কারনে কিছুই করতে
পারছিনা । নাঈম হোসেন নামের গ্রাহক বলেন, মানুষের থেকে নেয়া আমানতের টাকায় ওই
সংস্থার পরিচালকরা কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাশ বহুল অট্টালিকা নির্মান এবং বিভিন্ন
পন্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। তিনি বলেন, ওই সংস্থা গত ছয় মাস ধরে আমানতদাতাদের
মুনাফা দেওয়া বন্ধ করে দেয় পাশাপাশি আমানতের মুল টাকা ফেরত দিতে টালবাহান শুরু করেছে।
এতে করে বিক্ষুব্ধ হয়ে আমানতকারীরা নিরুপায় হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে
অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই সংস্থার পরিচালকদের
মুঠোফোনে আমানত ফেরত দেওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু তারা কোন কর্নপাত না করে সময় ক্ষেপন
করতে থাকে। এর এক পর্যায়ে ইউএনও টুকটুক তালুকদারের চাপে ওই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা পাঁচ
ভাই বুহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা কার্যালয়ে হাজির হয়।
খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে প্রায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষ আমানতকারী ইউএনও কার্যালয়ে ভীড়
জমায়। সেখানে সমিতির সাধারন সম্পাদক মোকাদ্দেস হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি
বলেন,করোনার কারনে তাঁদের কোটি টাকার ওপরে এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে
আটকা পড়েছে । এ কারনে আমানতকারিদের মুনাফা দিতে পারছিনা,আমরা উপজেলা নির্বাহী
অফিসারের নিকট সময়ের আবেদন করেছি ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার বলেন, আমানতকারিদের প্রতিনিধি এবং
সমিতির মালিকদের সমন্বয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে গ্রাহকদের
সুমদয় টাকা ফেরৎ দেয়ার অঙ্গিকার করেছে সমিতির মালিক পক্ষ । এ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি
অঙ্গিকার নামা তৈরী করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে । শর্ত ভঙ্গ করলে সমিতির মালিকদের বিরুদ্ধে আইন
অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে