আদমদীঘি (বগড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার আদমদীঘির সদর ও উপজেলায় সান্তাহার পৌর শহরে
প্রতি বছরের ন্যায় শহরের নানা এলাকায় সারি সারি সজনে গাছে শোভা পাচ্ছে সজনে ।
এ বছরে বাম্পার সজনে ফলন হয়েছে।। শেষ পর্যন্ত আবহওয়া অনুকুলে থাকলে সজনের
বাম্পার ব্যবসা হবে বলে স্থানীয় চাষিরা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তরা আশা প্রকাশ
করেছেন।
সরজমিনে আজ (সোমবার) সকালে শহরের রথবাড়ি, সাইলো সড়ক, পৌওতা, ইয়ার্ড
কলোনি, হাউজিং কলোনি, লকু কলোনি, মালশন, কাজিপুর, বশিপুর, সান্তাহার ষ্টেশন
কলোনি, সান্তাহার জংসন স্টেশনের দুপাশে অসংখ্য গাছে সজনে দেখা গেল। কোন রকম
কিটনাশক ছাড়াই ফুল থেকে অল্প দিনের মধ্য সজনেতে পরিনত হয়। একটি সজনে গাছে
কয়েক শত সজনে ধরে। স্থানীয় ও দেশের নানা প্রান্ত্রে সজনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
মুখরোচক ও পুষ্টিঘুনে ভরা এই সজনে নানা উপকারী তরকারি।
সজনে দুই প্রজাতির। একটা সারা বছর গাছে ধরে, সেটির নাম রাইখঞ্জন। আরেকটি
মৌসুমী সজনে। এটি বছওে এক বরাই হয়। সজনের ডাল মাটিতে পুতে রাখলেই সেখান
থেকে পাতা বের হয়। সড়কের ধাওে, ভিটেমাটিতে, পুকুরের চার পাশে এই আবাদ হয়।
কান কোন চাষি এই ফুলধরা সজনে গাছ মালিকের কাছ থেকে কিনে নেয়। সান্তাহারের
রফিক,বাবুল, শফিক নামে সজনে ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা এই সময় ফুলযুক্ত গাছ
কিনে রাখি। অপযুক্ত সময়ে সজনে ফল কেটে দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করি। আয়ও
ভাল হয়। কোন কোন ব্যবসায়ী সজনে রফতানি করে লক্ষাধিক টাকা আয় করে এক
মৌসুমে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও বিশেষঞ্জরা বলেন,আদদীঘির মাটি মজনে আবাদের জন্য খুব
উপযোগী। সজনের দামও ভাল। একটা বড় সাইজের গাছে ১০/১২ মন সজনে ধরে। পাইকরা
এসে গাছ থেকে কেটে নিয়ে যায়। চিকিৎকগন জানান, এই ফলে খনিজ লবন, আয়রণ
প্রটিন ও শর্করা রয়েছে। তাই এটিকে ’ পুষ্টির ডিনামাইট’ বলা হয়। এ ছাড়া
বর্তমান সময়ে সজনের পাতা খাওয়ার জন্য চিকিৎসগন ও বিশেষঞ্জগন বলছেন।
সান্তাহারের রথবাড়িতে রাজ নামে একজন সজনে গাছের মালিক জানান, আমার ৫/৭ টা
গাছ আছে। কয়েকজন পাইকার দেখে গেছে। আরো দাম উঠলে সজনে বিক্রি করবো। ।
প্রতি বছর এখান থেকে আমার ভাল আয় হয়। এই আবাদে তেম খরচ নেই বললেই চলে। নিজে
খাই,বিক্রি করি। সজনে বিক্রি শেষে সেই ডাল আবার অন্য স্থানে লাগাই। কোন রকম সার.
ওষুদ ছাড়ায় এই গাছ হয়। সান্তাহার থেকে এই সজনে দেশের নানা প্রান্তে বিক্রি হয়।
সান্তাহারের সজনে ব্যবসায়ী দুদু মিঞা জানান, বাম্পার ফলনের আশায় এবারেও বেশ
কিছু গাছ কিনে রেখেছি। আবহওয়া অনুকুলে থাকলে আয় ভাল হবে বলে আশা করছি।
প্রথমে এই সজনে পাইকরারা গাছ থেকে কিনে নেয়। তারপর এটি হাতবদল হয়। সব শেষে
আরেক দল এটি কিনে ট্রেনস যোগে দেশের নানা প্রান্ত্রে নিয়ে যায়। প্রতি মন সজনে
পাইকারীভাবে বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত। স্থানীয় বাজারে
এটি ৬০/৭০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, উপজেলার আদমদীঘি ও সান্তাহারের
মাটি সজনে আবাদের জন্য বেশ উপযোগী। এখানে বাণিজ্যিক ভাবে সজনে চাষ করে
আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। ফলে সজনে চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
মাঝে। এ মৌসুমে ২৫০ হেক্টর মেট্রিক টন সজনে চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। যার
আনুমানিক মুল্য পড়বে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, সবজির চেয়ে সজনে ডাটা পুষ্টিগুণ ও স্বাদে বেশি হওয়ায় যে কোনো বয়সের মানুষ সজনে খেতে ভালবাসেন। চিকিৎসকদের মতে, সজনেতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ আয়রণসহ প্রটিন ও শর্করা রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ সজনে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীরের পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে বলে সজনে ডাটা ওষুধী হিসেবেও ব্যাপক সমৃদ্ধ। এছাড়া সজনে গাছের ছাল এবং পাতা রক্তামাশায় পেটের পিরা ও উর্চ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ জন্য এটাকে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে।