নজরুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ:
সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়ার পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক শামসুল হক। সুতা বুনে প্রতিবন্ধী মেয়েসহ ৩ সদস্যের চলে সংসার। এক মাসেই বিল আসে ৪৬ লাখ টাকারও বেশি। নূন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থায় হঠাৎ অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিলের ফাঁদে পড়েন তাঁত শ্রমিক শামসুল হক।
শামসুল হক বলেন, দুটি বাতি আর একটি ফ্যান চালিয়ে বিল আসে দেড়শো থেকে দুইশো টাকা। অথচ হঠাৎ এক মাসে বিল আসে ৪৬ লাখ টাকা। বিদ্যুতের মিটারে এমন অস্বাভাবিক বিলের বিষয়ে স্থানীয়রাও হতবাক হন। তারা বলছেন, একজন শ্রমিকের বাড়ীর মিটারে এত বেশি বিল আসার কথা না।
জানা যায়, মাস কয়েক আগে শামসুল হকের মিটারে এমন অস্বাভাবিক বিল আসলেও মিটারের এমন আচরণ থেমে নেই। বেলকুচির অনেক গ্রাহকের মিটারের অবস্থা প্রায় একই রকম। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও মিটারে লাল বাতি জ্বলে, অনেক মিটারের ডিসপ্লে সাদা ও স্থির হয়ে যায় আবার আগের তুলনায় বিলও বেশি আসে। গ্রাহকের টাকা দিয়ে নিম্নমানের মিটার কিনে সরবরাহ করার অভিযোগও তোলেন তাঁরা। জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ভট্টকাওয়াক গ্রামের বরাত মোল্লা বলেন, আগে ৩/৪টি লাইট জ্বালিয়ে বিল আসতো ৪’শ টাকার গত ডিসেম্বর মাসে দুটি লাইট জ্বালিয়ে বিল আসে ২ হাজার ৮’শ টাকা। এমন অস্বাভাবিক বিলের কারণে ত্রুটিপূর্ণ মিটার সরবরাহকেই দুষছেন কৃষক বরাত মোল্লা।
ত্রুটিপূর্ণ মিটার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে একই উপজেলার সোনাতলা গ্রামের সোহেল রানার। গত মাসে দুটি লাইট ও একটি ফ্রিজ ব্যবহার করে বিল গুনতে হয়েছে ১ হাজার ৫শ টাকা অথচ গ্রীষ্মকালে বিল আসতো ৪ থেকে সাড়ে ৪’শ টাকা। এছাড়াও মিটারগুলোতে অটোপালস দেয়া, ডিসপ্লে সাদা হওয়া, সার্কিট নষ্ট হওয়া, পুড়ে যাওয়া, রিডিং উঠানামা করাসহ দৃশ্যমান মিটারের কার্য অক্ষমতা উঠে এসেছে। আরও জানা যায়, বৈদ্যুতিক মিটার ক্রয় করে আরইবি বা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। পরে এসব মিটার গ্রাহক পর্যায়ে স্থাপন করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। যেখানে ৫টি কোম্পানির মিটার নষ্টের বিষয়ে বলা হয়েছে। ৩ বছরে (২০২১-২০২৩) স্থাপন হওয়া মিটারগুলোর মধ্যে বি অ্যান্ড টি মিটার নষ্টের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬০৬টি। যা মোট মিটারের এক তৃতীয়াংশ। মেরামতের অনুপযোগী হওয়ায় মিটারগুলো বিনষ্ট করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জিএম জাকির হোসেন বলেন, যে অভিযোগগুলো আসছে, সেটি খুবই কম। তবে যান্ত্রিক বিষয়ে এমন হতে পারে।সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সিনিয়র জিএম আবু আশরাফ মো. ছালেহ বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) থেকে মিটার বরাদ্দ পাই। মিটারে সমস্যা থাকলে কর্তৃপক্ষকে শুধু অবহিত করতে পারি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ন্ত্রক সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের সদস্য বিশ্বনাথ শিকদার বলেন, মিটার ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। সারা দেশ থেকে মিটার নষ্টের তথ্য সংগ্রহ করছে। কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। তখন মিটার নষ্টের কারণ জানা যাবে। সব কোম্পানির মিটার যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশও করবে। সিরাজগঞ্জের মিটার নষ্টের বিষয়েও জিএমদের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা হবে বলে তিনি জানান।