চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা – কিরণগঞ্জ সীমান্তে তখন কঠিন পরিস্থিতি, এর মধ্যেই কৃষক এনামুল হক নিজের টাকা খরচ করে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি সদস্য ও বাংলাদেশি নাগরিকদের কলা ও পানি খাওয়াচ্ছেন। ভিডিওতে দেখা যায় সবাই যখন মাতৃভূমি রক্ষায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে, তখন তাদের জন্য বোতল ভত্তি পানি আর কথা নিয়ে হাজার এই কৃষক নিজে গিয়ে গিয়ে টহলরত বিজিবি সদস্যদের কথা পানি খাওয়াচ্ছেন।
এই দৃশ্যর কয়েক সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল
ঘটনার পর সেই ভাইরাল কৃষকের পরিচয় জানার চেষ্টা করে প্রতিনিধি সিফাত রানা , এনামুলের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর মোকারিমটোলা গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত জালাল উদ্দিন, পেশায় কৃষক এনামুল হক , দাম্পত্য জীবনে ৫ সন্তানের জনক। ৩ মেয়ে, ২ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার বসবাস।
জানা যায়, গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তে গাছ কাটাকে নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল, সেখানেই বিজিবি সদস্য ও বাংলাদেশের নাগরিকদের কলা ও পানি খাওয়াতে দেখা গেছে কৃষক এনামুল হককে। আর সেই দৃশ্য দেশ বিদেশের অনেকেই শেয়ার করে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন ওই ব্যক্তিকে।
মেহেদী হাসান নামে একজন যুবক ফেসবুকে লিখেছেন, চমৎকার ভালোবাসা এই জাতি কে রুখবে কে।
কৃষক এনামুল হক জানান, আমার বাড়ি থেকে সীমান্ত ৪ কিলোমিটার দূরে প্রথমে শুনতে পাইলাম বিএসএফ আমাদের বাংলাদেশের মাটিতে এসে গাছ কাটছে শুনতে পেয়েই আমি সীমান্তে চলে গেছি, গিয়ে দেখলাম আমাদের বিজিবি বেলা ১১ টার দিক থেকে কিছুই খাইনি, আমি তখন দৌড়াতে দৌড়াতে নিজের টাকা খরচ করে কলা পানি নিয়ে গিয়েছিলাম, কাউকে একটা কথা আবার কাউকে দুই টা দিয়েছে, আবার পানি যখন শেষ হয়ে গেছে আবার দৌড়াতে দৌড়াতে পানি নিয়ে গিয়ে অনেক জনকে খাওয়াচ্ছি। তিনি আরো বলেন আমি দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু আমাদের দেশের ১ ইঞ্চি মাটি ও ছাড়তাম না।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজল বার্তা২৪.কমকে বলেন, এর আগে সীমান্তে কাস্তে হাতে ভাইরাল হয়েছিল বাবুল আমার আপন চাচা, এবার বিজিবি কে কলা পানি খাইয়েছে। তার এমন কাজে আমরা এলাকাবাসী খুব গর্বিত। এ ধরণের কাজ করছে দেশপ্রেমের টান ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষার ক্ষেত্রে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কিরণগঞ্জ সীমান্তে দুই দেশের স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুরুতে কিরণগঞ্জ সীমান্তে এর সূত্রপাত হলেও বেলা ৩ টার দিকে তা চৌকা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এটি বিস্তার লাভ করে।পরে এক ব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, চৌকা ও কিরণগঞ্জ ক্যাম্পের মাঝামাঝি সীমান্ত পিলার ১৭৭ বরাবর বাংলাদেশের ভেতরে কিছু আমগাছ ছিল। ওই আমগাছ কাটা নিয়ে ভারতীয় নাগরিক ও বাংলাদেশি নাগরিকের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন শূন্যরেখা বরাবর দুই দেশের নাগরিকেরা দাঁড়িয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বিজিবির জনবল বাড়ানো হয় এবং তাঁরা ঘটনাস্থলে চলে আসেন।
পরে বিকেল চারটা ১০ মিনিটে বিজিবি ও বিএসএফের কমান্ডার পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক হয়। যেখানে এ ঘটনার জন্য বিএসএফের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি গাছ কাটার বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।