হারুন অর রশিদ সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা– জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদ-নদীতে সৃষ্ট প্লাবনের সাথে ফসলের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। তবে এবারে উজানের পাহাড়ি ঢল ও আষাঢ়ের বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট প্লাবন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা পাড়ের ৫৫টি গ্রামের মানুষের জীবনে আশির্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বানের জলে তলিয়ে গেছে ১ হাজার ৩৮৪ হেক্টর জমির খরিপ ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৮ হাজার কৃষক। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম হতে পারে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন ফসল।
উপজেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, চলতি খরিপ-১ মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীতে সৃষ্ট প্লাবনে কাপাসিয়া, হরিপুর, তারাপুর, চন্ডিপুর, বেলকা ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নে জলে তলিয়ে গেছে ১ হাজার ৩৯৪ হেক্টর জমির ফসল। যারমধ্যে তিল ডুবে গেছে ৩০ হেক্টর। এরমধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হেক্টর এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হেক্টর। আউশ ক্ষতি হয়েছে ৭৭০ হেক্টরের। আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যথাক্রমে ৫৬০ ও ২১০ হেক্টর। জলে ডোবা ৬৯ হেক্টর শাকসবজির মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪ হেক্টর এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হেক্টর।
এদিকে, পাট ডুবে গিয়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৩৫ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত ১৯০ হেক্টর আমন বীজতলার মধ্যে ২৫ হেক্টর সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৬৫ হেক্টর।
এবারের বন্যায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯২৫ জন। উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ২ হাজার ৭০৫ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন ফসল। টাকার অংকে যার পরিমাণ ১ হাজার ৫০১ দশমিক ৮২ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাপাসিয়া, হরিপুর, চন্ডিপুর, বেলকার চরগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, তিল আউশ, শাকসবজি ও আমন বীজতলা জলে ডুবে গেছে। পানি কমায় এখন ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে তিল, শাকসবজি এবং পাট খেতগুলো। তবুও কিছু তিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। পচে যাওয়া তিল তুলে জলের মধ্যে উঁচু ঢিবি করে রেখেছেন অনেকেই। ঢিবি থেকে সেই তিল ভেলা কিংবা নৌকো করে পাড়ে তুলতে দেখা যায় কৃষকদের। একটুখানি রোদ উঠলেই সেগুলো শুকাতে দিচ্ছেন কিষাণীরা।
কথা হয় উপজেলা সদর থেকে অন্তত ২৫ কিলোমিটার দূরে কাপাসিয়ার কাজিয়ার চরের সোলেমানের স্ত্রী মরিয়ম সাথে। তিল শুকাতে শুকাতে তিনি বলেন, ৩ বিঘা জমিতে তিল লাগিয়েছিলাম। আশা ছিল অন্তত ২০ মন তিল পাব। কিন্তু কপাল খারাপ। রোদে শুকাতে দেওয়া তিলগাছগুলো সরিয়ে দেখালেন চটের মধ্যে দুই একটি করে তিল পড়ে আছে। বাকী সব শেষ।
হরিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুরের বাড়াইকান্দি, চন্ডিপুরের উজান বোচাগাড়ী চরের কৃষকরা প্রতিবছর বন্যা হবে ধরে নিয়ে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে গাঞ্জিয়া, নাজিরশাইল, বিন্দিপাকড়ি, তিলকাপুড়, ঢ্যাপার মতো স্থানীয় জাতের ধান বীজ সংরক্ষণ করে থাকেন বলে জানালেন ভাটিকাপাসিয়ার ক্ষতির শিকার দুই কৃষক আব্দুল কাহার ও ইউনুছ আলী। তারা আরো বলেন, শুধু তাই নয়, তিন স্তরের বীজ সংরক্ষণ করি আমরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, বন্যায় ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আমরা অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে পুনর্বাসন নয়, আমরা বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ দিচ্ছি