সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতাঃ কন্যার চেয়ে পিতার বয়স ৩ বছর কম। সুন্দরগঞ্জে বয়স লুকিয়ে পিয়ন পদে চাকুরি এখন বিপদে পড়েছেন নিজেই বয়স লুকিয়ে মোঃ আব্দুল কাদের মন্ডল পিয়ন পদে চাকুরি করছেন ৩৫ বছর। যে ভাবেই হোক একটা অষ্টম শ্রেণি পাস সার্টিফিকেট যোগার করে চাকুরিতে যোগদান করেছেন ১৯৯০ সালে। সেই সার্টিফিকেটে জন্ম তারিখ দেখিয়েছেন ১৯৭৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর । চাকুরি করতে করতে বয়সের ভারে নূয়ে পড়েছেন তিনি। এখন তিনি ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। এমনকি তার স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হ্েচ্ছ। মাঝে মাঝে কর্মস্থলে গেলেও কিছু সময় বসে থেকে বাড়িতে ফিরেন। সার্টিফিকেট মোতাবেক তাকে চাকুরি করতে হবে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত। কখনো ভাবেননি সত্য গোপন থাকে না। সত্যটি প্রকাশ পেয়েছে জাতীয় পরিচয় পত্রে। জাতীয় পরিচয় পত্রে (এনআইডি) দেওয়া সঠিক জন্ম তারিখ চাকুরি জীবনের কাল হবে কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। এখন এনআইডি সংশোধনের চেষ্টা করছেন কয়েক বছর থেকে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কারণ এনআইডি সংশোধন করলে কাদেরের জন্ম তারিখ দেখাতে হবে তার একমাত্র কন্যার জন্মের ৩ বছর পর। এতেই বোঝা যায়, বয়সের ক্ষেত্রে বিশাল ঘাপলা করে চাকুরি নিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় কাদের মন্ডল ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ উভয়েই পড়েছেন বিপাকে। এ ঘটনার অবতারণা হয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা আকন্দপাড়া দাখিল মাদরাসার পিয়ন আব্দুল কাদের মন্ডলের চাকুরি জীবনে। পিয়ন/পরিচ্ছন্ন কর্মী কাদের মন্ডল (৭২) উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া গ্রামের মৃত বক্তার মন্ডলের ছেলে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এনআইডি মোতাবেক পিয়ন কাদের মন্ডলের জন্ম তারিখ ১৯৫২ সালের ২৬ মার্চ। তার ভোটার নম্বর ৩২০০৭৩৯৯৯৫৭০। এনআইডি অনুযায়ি কাদের মন্ডলের একমাত্র কন্যা মোছাঃ কাজভান বেগমের জন্ম তারিখ ১৯৭০ সালের ৪ নভেম্বর যার ভোটার নম্বর ৩২০০৭৩৯৯৮৩৯। এনআইডি মোতাবেক কাদের মন্ডলের ছোট ভাই গণি মন্ডলের জন্ম তারিখ ১৯৬৯ সালের ১০ এপ্রিল যার ভোটার নম্বর ৩২০০৭৩৯৯৮৬৬২। পিয়ন কাদের মন্ডলের এনআইডি মোতাবেক বর্তমান বয়স ৭২ বছর। সে হিসেবে ১২ বছর আগে অর্থাৎ ২০১২ সালে তার অবসর গ্রহণের কথা। কিন্তু তিনি অবসর গ্রহণ না করে ১২ বছর অতিরিক্ত চাকুরি করছেন। আর ১২ বছরে অতিরিক্ত সরকারি অর্থ উত্তোলন করেছেন ১৪ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮২৪ টাকা।
সরেজমিনে জানা যায়, কাদের মন্ডল ১৯৯০ সালের ১লা জানুয়ারি ধোপাডাঙ্গা আকন্দপাড়া আদর্শ দাখিল মাদরাসায় পিয়ন পদে যোগদান করেন। এসময় তিনি তার দাখিলকৃত কাগজপত্রে জন্ম তারিখ দেখান ১৯৭৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর। এতে এনআইডি মোতাবেক দেখা যায়, কাদের মন্ডল তার কন্যা কাজভান বেগমের ৩ বছর পর এবং ছোট ভাই গনি মন্ডলের জন্মের ৪ বছর পর জন্ম গ্রহণ করেন। এবিষয় নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃস্টি হয়েছে।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, এনআইডি মোতাবেক ২০১২ সালে কাদের মন্ডলের চাকুরির মেয়াদ শেষ হলে অবসর গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি এনআইডি সংশোধন করে দেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। তারপর ১২ বছর থেকে তিনি এনআইডি সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। কারণ এনআইডি সংশোধন করতে আপনজনদের এনআইডির কপি দেওয়া লাগে। কন্যার জন্মের ৩ বছর পর পিতার জন্ম তারিখ দেখানো লাগে। তাই তার এনআইডি সংশোধন হচ্ছে না। এব্যাপারে কাদের মন্ডল বলেন, বয়সের সমস্যা সমাধানে কয়েকবার চেষ্টা করা হয়েছে। এখনো সমাধান হয়নি। তবে আশাবাদী তিনি।
এব্যাপারে মাদরাসার সুপার মহসিন আলী জানান, ১৯৯৩ সালে তিনি যোগদান করেছেন। তার যোগদানের আগে কাদের মন্ডল যোগদান করেছেন। বর্তমানে কাদের বয়সের ভারে নূয়ে পড়েছেন। ঠিকমত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। বিগত সরকারের আমলে কাদেরের মামা অত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করায় চাপ প্রয়োগ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি ১২ বছর অতিরিক্ত চাকুরি করছেন। সুপার আরো বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর থেকে তিনি এনআইডি সংশোধনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছেনা। কাদের ১২ বছর থেকে এনআইডি সংশোধনে বেশ কয়েকবার মাদরাসা কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে সময় নিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি ২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল সময় চেয়ে শেষ আবেদন করেছেন। এ আবেদনে তিনি লিখেছেন এবারে এনআইডি সংশোধন করতে না পারলে নিজেই পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ করবেন। কিন্তু তার দেওয়া সময় পেরিয়ে গেছে। পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণ একটাও করেননি। বর্তমানে আব্দুল কাদের মন্ডল যে প্রত্যয়ন দিয়ে চাকুরি করছেন তাতে তার একমাত্র কন্যার চেয়ে তিনি বয়সে তিন বছরের ছোট।
মাদরাসার সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাদের মন্ডল সঠিক বয়স লুকিয়ে চাকুরি নেওয়া ঠিক করেন নি। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, উপযুক্ত কাগজপত্র দাখিল করতে না পারায় কাদের মন্ডলের এনআইডি সংশোধনের আবেদন দুই বার বাতিল করা হয়েছে। তৃতীয় বার তার আবেদন রয়েছে ঢাকা অফিসে।