বগুড়া প্রতিনিধিঃ- ঈদের আগে বকেয়া ভাতা পরিশোধ ও ভাতা বাড়ানোর আশ্বাসে একমাসের জন্য কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন পোস্ট গ্র্যজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন তাদের সঙ্গে মিটিং শেষে ঈদের পর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো এবং ঈদের আগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনিদের বকেয়া ভাতা পরিশোধের আশ্বাসে দেওয়ার পর তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষনা দিয়ে জানান ‘আজ (গতকাল) বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে যোগদান করবেন’ বলে জানিয়েছেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ।
মাসিক ভাতা ৩০ হাজার টাকা করাসহ চারদফা দাবিতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালসহ দেশের সবক’টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। দ্বিতীয় দফায় ৬২ ঘণ্টার কর্মবিরতি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শেষ হয়েছে। গত সোমবার রাত ৮টার পর থেকে দ্বিতীয় দফা এ কর্মবিরতি শুরু হয়। এর আগে গত শনিবার রাত ৮টা থেকে সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকরা প্রথম দফার ৪৮ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন।
তাদের দাবিগুলো হলো-ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বেতন ৩০ হাজার টাকা এবং পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকদের বেতন বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে। পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসকদের (এফসিপিএস, রেসিডেন্ট ও নন রেসিডেন্ট) বকেয়া ভাতা প্রদান করতে হবে। বিএসএমএমইউয়ের অধীন ১২টি প্রাইভেট ইন্সটিটিউটের নন-রেসিডেন্ট ও রেসিডেন্টদের আকস্মিক ভাতা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ভাতা পুনর্বহাল করতে হবে এবং অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বগুড়া শজিমেক হাসপাতাল চত্বরে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিট থেকে প্রায় ১২টা পর্যন্ত ইন্টার্নি চিকিৎসকরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। শজিমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ^াসের প্রেক্ষিতে একমাসের জন্য আমরা কর্মবিরতি স্থগিত করেছি। ঈদের পর যদি আমাদের ভাতা বাড়ানো না হয় তারপর আবারও আমরা আন্দোলনে যাব।
ইলিয়াস হোসেন আরও বলেন, বগুড়া শজিমেক হাসাপাতালে ১৫০ ইন্টার্ন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। সকাল-বিকেল ও রাতের তিন শির্ফটে প্রায় ১৮ ঘন্টা তারা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে দুপুর ২টার পর থেকে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ও রেজিস্ট্রার চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করে চলে যান। এরপর থেকে ইন্টার্ন চিকিসকরাই হাসপাতালে আসা সেবা প্রার্থীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। শজিমেক হাসপাতালে প্রতি ওয়ার্ডে অন্তত দুই থেকে তিনজন করে শির্ফটগুলোতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন ও সকালের শির্ফটে সব ইন্টার্নরাই চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. তৌফিক হাসান নিশাত বলেন, এই সময়ে এসে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা পরিশ্রম করার পর ১৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া একরকম তামাশা। আপাততঃ আমরা কর্মবিরতি স্থগিত করে নিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) রাত থেকে কাজে যোগদান করবো। তবে দাবি মানা না হলে এক মাস পর আবারও আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি দেব।
এদিকে দফায় দফায় ইন্টার্নি চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসা সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ। ডাঃ ওয়াদুদ বলেন, শজিমেক হাসপাতালে প্রতিদিন ১৮শ’ থেকে ১৯শ’ রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। তবে রমজান মাসের কারণে রোগী অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তাই সমস্যাটা প্রকট হয়নি।