বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হলেও ২০২৩ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কেমন দুর্নীতি হয়েছে তা প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ১৫ বছরে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুষের ন্যূনতম প্রাক্কলিত পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)। এর মধ্যে ২০২৩ সালে ঘুষের হার সবচেয়ে বেশি ভূমি, বিচারিক সেবা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, পাসপোর্ট, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও বিআরটিএ-তে বলেও জানায় টিআইবি। ওই বছর প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি।
পাসপোর্ট সেবা নিতে গিয়ে গত বছর দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হয়েছেন বলেও জরিপে জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, সেবা খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় বিচারিক সেবা নিতে গিয়ে।
আজ মঙ্গলবার সকালে ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে ‘সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩ প্রতিবেদন’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানানো হয়।
৮ বিভাগের ১৫ হাজার ৫১৫টি পরিবারের তথ্য এই জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৩ মে থেকে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট পর্যন্ত জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। আর ১৫ বছরের হিসাব টিআইবি’র ১০টি খানা জরিপের তথ্য-উপাত্ত থেকে করা হয়েছে।
টিআইবির প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালে জাতীয়ভাবে প্রাক্কলিত ঘুষের পরিমাণ ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ১.৪৩ শতাংশ ও জিডিপির ০.২২ শতাংশ। এই পরিমাণ অর্থ দেশের মানুষ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ভূমিতে ২ হাজার ৫১৩ কোটি, বিচারিক সেবায় ২ হাজার ৫১৩ কোটি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় ২ হাজার ৩৫৭ কোটি ৫০ লাখ, পাসপোর্টে ১ হাজার ৩৫০ কোটি, স্থানীয় সরকারে ৮৪০ কোটি ৯০ লাখ, বিদ্যুতে ৩০৯ কোটি ৬০ লাখ, স্বাস্থ্য খাতে ২৩৫ কোটি ১০ লাখ ও শিক্ষায় ২১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তালিকায় মোট ১৪টি খাতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, সেবা পেতে খানা বা পরিবার প্রতি ৫৬৮০ ঘুষ দিতে হয়েছে। গড় ঘুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বিচারিক সেবা, ভূমিসেবা ও ব্যাংকিং খাতে। সেবা পেতে ৭০.৯ শতাংশ পরিবার দুর্নীতি ও ৫০. ৮ শতাংশ পরিবার ঘুষের শিকার হয়েছে।
এ বিষয়ে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিচারিক সেবা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় দুর্নীতি ও ঘুষের উচ্চ হার অব্যাহত। যা সাধারণ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা। অন্যদিকে ভূমি সেবা, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বিআরটিএর মতো সেবায় উচ্চ দুর্নীতি ও ঘুষ বিদ্যমান, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ সেবা প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, টিআইবির খানা জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ (এপ্রিল) পর্যন্ত সেবাখাতে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুষের ন্যূনতম প্রাক্কলিত পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে খানাগুলো গড়ে ৫ হাজার ৬৮০ টাকা ঘুষ ও নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছে।