নিউজ ডেস্কঃ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা আগামীকাল (শুক্রবার) কলা, আইন ও সামাজিকবিজ্ঞান ইউনিট দিয়ে শুরু হচ্ছে। কিন্তু, পরীক্ষার আগেই একটি চক্র ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁস করে বিক্রির জন্য টেলিগ্রামে গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সংক্রান্ত কিছু তথ্য আজ বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক কালবেলার হাতে এসেছে।
প্রশ্ন ফাঁসকারী এই চক্রের প্রধান হলেন আহমেদ নিলয় (টেলিগ্রাম প্রোফাইলে দেওয়া) নামে এক ব্যক্তি। @ahmeedniloybd হলো তার এই টেলিগ্রাম প্রোফাইলের ইউজার নেম। প্রশ্ন ফাঁস করার জন্য তার একটি গোপন টেলিগ্রাম গ্রুপ আছে। যদি কোনো ভর্তি ইচ্ছুক বিশ হাজার টাকা অগ্রিম ও ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান করেন, তাহলে সেই গোপন গ্রুপে তাকে যুক্ত করা হয় এবং হুবহু প্রশ্ন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। তারপর বাকি ৩০ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আহমেদ নিলয় নামের ওই ব্যক্তিকে তার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ক্যান্ডিডেট সেজে বার্তা পাঠান কালবেলার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। বার্তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামীকালের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানালে তিনি মোট ৫০ হাজার টাকা চান।
তিনি বলেন, আজকের মধ্যেই বিশ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করতে হবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের এক কপি ছবি বিকেল চারটার মধ্যেই দিতে হবে। এরপর একটি গোপন গ্রুপে যুক্ত করা হবে। সেখানেই আগামীকালের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সকালে (পরীক্ষার দিন) দেওয়া হবে।
এ সময় শতভাগ কমন পড়বে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য যতগুলো প্রশ্ন দেওয়া প্রয়োজন, ততগুলোই দেওয়া হবে। শতভাগ দিলে তো ধরা পড়ে যায়।
কোন বিকাশ নম্বরে তাকে টাকা পাঠাতে হবে সেটা জিজ্ঞেস করলে তিনি একটি বিকাশ নম্বরও দেন। এখানে তিনি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়ার জন্য বলেন। তার দেওয়া বিকাশ নম্বরটি হলো – ০১৬০৬০৬৮৫৯৭।
এ ছাড়া ঢাবির ভর্তি ইচ্ছুক সেজে বার্তা পাঠানো কালবেলার এই প্রতিবেদককে তিনি তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরে কল দিতে মানা করেন এবং অনলাইনেই অর্থাৎ টেলিগ্রামে মেসেজ-কল দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। উল্লেখ্য, তার টেলিগ্রাম প্রোফাইলে লেখা আছে যে, প্রশ্ন ফাঁস করা শুধু আমার পেশা নয়, এটি আমার একটি নেশা।
কী কথোপকথন হয়েছিল কালবেলা প্রতিবেদকের সঙ্গে?
প্রতিবেদক : আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভাইয়া, আমি এবার ঢাবিতে অ্যাডমিশন টেস্ট দেব। কিন্তু কোনো প্রিপারেশন নিতে পারিনি। কোচিংও করিনি। আমার বাবা দুবাইতে থাকে, এখন উনি বলতেছে যে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতেই হবে। ভাইয়া, দয়া করে হেল্প করা যায় আমাকে? বিশেষ করে ঢাবির বি ইউনিট। টাকা-পয়সা কোনো সমস্যা না ভাই। ভাইয়া প্লিজ..
প্রশ্ন ফাঁসকারী : Conditions- মোট ৫০০০০ টাকা প্রশ্নের দাম। Advance ২০০০০ টাকা আর ৩০০০০ Exam দিয়ে আসার পরে। Dhaka University B Unit এর Admit Card এর ক্লিয়ার পিক দিতে হবে। ২০০০০ টাকা + Admit Card এর ছবি আজকে বিকেল ৪টার মধ্য জমা দিয়ে Secret গ্রুপে Join হতে হবে। Conditions এ রাজি থাকলে জানাবে Messenger ID তে Add করে নেব।
প্রতিবেদক : ভাইয়া, আমি দুপুর পরেই যোগাযোগ করব। কাইন্ডলি নম্বরটি দিয়ে রাখুন ভাইয়া।
প্রশ্ন ফাঁসকারী : ০১৬০৬০৬৮৫৯৭
এ ছাড়া, গোপন গ্রুপে দেওয়া এই প্রশ্ন ফাঁসকারীর (আহমেদ নিলয়) একটি বার্তা কালবেলার হাতে এসেছে। সেখানে তিনি লেখেন, ‘গ্রুপের সকল শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য করে বলছি। প্রথমেই বলা হচ্ছে বিষয়টা গোপন রাখার জন্য। আশা করি কথাগুলো কেউ ভাইরাল করবে না। তোমাদের মধ্যে মোট ৩০ জন ঢাকা ইউনিভার্সিটি বি ইউনিটের প্রশ্ন পাবে পরীক্ষার আগের রাতে শতভাগ সঠিক উত্তরসহ। আমরা কন্টাক ডিলে প্রশ্নটা কিনে নিচ্ছি কোনো একটা লিংক থেকে। আমাদের কোচিং সেন্টারের মোট ৭০ জন ছাত্র আর এই গ্রুপ থেকে মোট ৩০ জন ছাত্র নেওয়া হবে। সর্বমোট ১০০ জন প্রশ্ন পাবে। প্রশ্ন দেওয়া হবে পরীক্ষার আগের রাত ৩ থেকে ৪ টার মধ্য। তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে প্রশ্ন দেওয়ার জন্য বাছাই করা ৩০ জনকে আমাদের গোপন গ্রুপে যোগ করানো হবে। আর এই গ্রুপে প্রশ্ন দেওয়া হবে পরীক্ষার আগের রাতে।
শর্তগুলো-মোট ৫০০০০ টাকা প্রশ্নের দাম। Advance ২০০০০ টাকা আর ৩০০০০ Exam দিয়ে আসার পরে। Dhaka University B Unit এর Admit Card এর ক্লিয়ার পিক দিতে হবে। ২০০০০ টাকা + Admit Card এর ছবি 22 FEB বিকেল 4 টার মধ্য জমা দিয়ে Secret গ্রুপে Join হতে হবে। Condition এর কোন নড় চড় হবে না, যারা প্রশ্ন নিতে চাও, তারা এই Condition মেনে দ্রুত আমাকে Telegram এ Inbox এ নক দিয়ে রাখো। কথাগুলো তোমাদের বলতাম না। তবে তোমাদের মধ্য কয়েকজনের রিকোয়েস্টে এ কথাগুলো বললাম। কেউ নিতে চাইলে অবশ্যই আমাকে Telegram এ Message দিবে। অবশ্যই Telegram এ নক দিবে, Whatsapp এ Message দিলে Reply পাবে না। আর কেউ Telegram এ কল দিবে না। Just Message / Voice Message দিবে। যারা গ্রুপ থেকে Help পেয়েছ তারা গ্রুপে Join হয়ে থাকো। আর যারা প্রশ্ন নিবে না তারা গ্রুপ থেকে left নিতে চাইলে নিতে পারো।”
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, উপাচার্য মহোদয় একটি মিটিংয়ে আছেন। মিটিং শেষ হলে উনাকে বিষয়টি জানানো হবে। তা ছাড়া, আমি প্রক্টোরিয়াল বডিকে জানিয়ে দিচ্ছি। আর তথ্যগুলো সাপেক্ষে এই চক্রের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
সুত্রঃ কালবেলা