নবীজি (সা.) এর ভাষায় সর্বোত্তম মানুষ যিনি।
মানুষের উত্তম-অনুত্তম কিংবা সর্বোত্তম হওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। একেকজনের দৃষ্টিতে একেক রকমের মানুষ উত্তম। প্রকৃত উত্তম মানুষ তারাই, যারা কোরআন-হাদিস তথা আল্লাহ তাঁর রাসুলের দৃষ্টিতে উত্তম। নিম্নে হাদিসের ভাষ্যমতে যাদের উত্তম বলা হয়েছে, তাঁদের পরিচয় তুলে ধরা হলো—
নৈতিকতায় উত্তম ব্যক্তি : নবীজি (সা.)-এর দৃষ্টিতে তাঁরা উত্তম মানুষ ছিলেন, যাঁদের চরিত্র ভালো ছিল।নৈতিকতার দিক থেকে যাঁরা উত্তম, তাঁদের তিনি সর্বোত্তম বলে আখ্যা দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) অশ্লীল ভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে নৈতিকতায় সর্বোত্তম । (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)
যারা কোরআন শেখে ও শেখায় : সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ মহাগ্রন্থ আল কোরআন।
যাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থের চর্চায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে, নবীজি (সা.) তাদেরও শ্রেষ্ঠ বলে আখ্যা দিয়েছেন। উসমান (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়। (বুখারি, হাদিস : ৫০২৭)
যাঁরা নামাজে বিনয়ী হয়ে দাঁড়ায় : যাঁরা নামাজে দাঁড়ানোর সময় অত্যন্ত বিনয়ের সহিত দাঁড়ায়, হাদিসের ভাষায় তাদের ভালো মানুষ বলা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যকার উত্কৃষ্ট হচ্ছে ওই সব লোক, যারা নামাজের মধ্যে নিজেদের কাঁধ বেশি নরম করে দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৬৭২)
যে তার পরিবারের চোখে উত্তম : মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখতে পায় তার পরিবার। একটা মানুষের আসল চেহারা তার সঙ্গে বসবাস করা মানুষগুলো অন্যদের তুলনায় ভালো জানে। তাই নবীজি (সা.) মানুষের উত্তম হওয়ার মাপকাঠিতে পরিবারের দৃষ্টিকোণকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯৭৭)
যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম : স্ত্রী তার স্বামীকে খুব কাছ থেকে দেখতে পায়, স্বামীর চরিত্র, আমল-আখলাক সম্পর্কে সেই বেশি অবগত। তাই কোনো দ্বিনদার স্ত্রী যদি তার স্বামীর উত্তম চরিত্র ও আমল-আখলাকের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করে, বুঝতে হবে সে আসলেই উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলমান হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের কাছে উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম। (তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
যারা মানুষের উপকার করে : হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মানুষের মধ্যে উত্তম তারা, যারা অন্যের উপকার করে। (তবরানি)
যে লেনদেনে স্বচ্ছ : সমাজে একটা কথা এমন প্রচলিত আছে যে কোনো লোকের সঙ্গে আত্মীয়তা করার আগে তার সঙ্গে লেনদেন করে দেখা উচিত, অর্থাৎ লেনদেন করলে ওই মানুষটার সম্পর্কে জানা যায়, বিষয়টি ইসলামেও গুরুত্বপূর্ণ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন লোক নবী করিম (সা.)-এর নিকট তার (প্রাপ্য) উটের তাগাদা দিতে আসে। আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবিদের বলেন, তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা বলেন, তার চেয়ে উত্তম বয়সের উটই পাচ্ছি। লোকটি বলল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনাকে যেন পূর্ণ হক দেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, তাকে সেটি দিয়ে দাও। কেননা মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে। (বুখারি, হাদিস : ২৩৯২)
যে আমল দীর্ঘ হায়াত পেয়েছে : আবু বাকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে কে নিকৃষ্ট? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)।