আগের মত বিক্রি নেই মাছ ধরার ফাঁদ জলেঙ্গা পলাই টেপাই ও ডারকী ।
মোস্তাফিজুর রহমান বদরগঞ্জ রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই ব্যবহার কমে যাচ্ছে। এই তো কিছুদিন আগের কথা অল্প বৃষ্টির পানিতে ভরে যেত খাল বিল। কারণ খাল বিলে প্রচুর মাছ ছিল। সামান্য বৃষ্টিতে মাছ উজানে যেত। এই মাছ আটকানোর জন্য বিলে জলেঙ্গা, ডারকী ও টেপাই বসানো হতো। জমির আইল কেটে ডারকী বসালে প্রচুর মাছ ডারকীর ফাঁদে আটকা পড়তো। সেই মাছ কেউ খেত আবার কেউ বিক্রি করতো।
বেশিরভাগ জেলেরা বর্ষার অপেক্ষায় থাকতো জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই দিয়ে মাছ ধরার জন্য। বিশেষ করে যাদের নিজস্ব পুকুর আছে। তারা জলেঙ্গা, টেপাই ভেতর মাছের খাবার দিয়ে রাতে পুকুরে বসিয়ে রাখত। আর তা খেতে গিয়ে মাছ ভেতর আটকে যেত। ভাদ্র মাসে রোদে অতিষ্ট হয়ে মাছ যখন একটু ছায়ার জন্য ছুটাছুটি করত তখন টেপাই দিয়ে মাছ আটক করা হত। খাল ও পুকুর থেকে জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই দিয়ে মাছ ধরা হত। ব্যাপক হারে জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছের বংশবৃদ্ধি যেমন কমেছে তেমনি অধিক জনসংখ্যার মাছের যোগান দিতে ব্যাপক হারে মাছ নিধনের ফলে মাছ এখন খাল বিল নেই বললে চলে। তাই জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই দিয়ে মাছ ধরতে এখন আর কেউ আগ্রহী নন। জেলেরা মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে ডারকী বসাতে বিরক্তিবোধ করেন।
এ দিকে বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বদরগঞ্জ বাজারে জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছেন মোকছেদ আলী (৫৫), আজা মিয়া (৬০),নূর মোহাম্মদ (৪৫),এজারুল হক (৩৮)।
মধুপুর মন্ডলপাড়া এলাকার মোঃ মোকছেদ আলী বলেন, আমি ২০ বছর ধরে বদরগঞ্জ বাজারে জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই বিক্রি করে আসছি। আগে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছিল এখন তার এক ভাগও বিক্রয় হয় না।
আর এক ব্যবসায়ী মোঃ আজা মিয়া বলেন, বদরগঞ্জ বাজার সহ রংপুর জেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই ৩০ বছর ধরে বিক্রয় করে আসছি। আগের তুলনায় মানুষ একটু এখন কম কিনছে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে বর্তমান জলেঙ্গা ৩০০ টাকা পলাই ২৫০ টাকা ডারকী ১৫০ টাকা টেপাই ৬০০ টাকা দাম বাড়ার কারণে এখন আরো কম বিক্রি হচ্ছে।কারণ এইসব ফাঁদ দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়। এখন অবশ্য যাদের পুকুর আছে কিংবা পোনার চাষ করে তারাই শুধু ব্যবহার করে। পুকুরে পানি অধিক হলে পানি কমানোর জন্য ডারকী ও জাল বসানো হয়। যাতে পোনা পুকুর থেকে বের হতে না পারে।
ঘৃলাই নদী বদরগঞ্জ বিষ্ণুপুর এলাকার খটখটিয়ার বিল, রামনাথপুর ইউনিয়নের বোয়ালির বিল, দামোদরপুর ইউনিয়নের চানকুটির মধুপুর ইউনিয়নের ডারার পাড় এলাকায় ডারকী ও জলেঙ্গা বসিয়ে ছোট মাছ ও চিংড়ি ধরার কার্যক্রম চলে। অন্য কোন স্থানে প্রচলন নেই বললেও চলে। ব্যবহার কমে যাওয়ায় তেমন বিক্রি হয় না বলে উৎপাদকের পরিবারে বাড়তি আয়ও কমে গেছে। তাছাড়া খাল বিল মাছ শূন্য হয়ে পরায় জলেঙ্গা, পলাই, ডারকী ও টেপাই দিয়ে মাছ ধরে যারা বাজারে বিক্রি করত। তাদের আয়ও কমে গেছে। জেলেরা এখন বেশিরভাগ জাল দিয়ে মাছ ধরতেছে।