এক দফায় একাট্টা সব দলঃ ফখরুল ।
ভোটের আগে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে, এটা এখন বিরোধী সব দলই চাইছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “জনগণ এখন একত্রিত, সব রাজনৈতিক দল আজকে এক হয়ে গেছে। যারা যুগপৎ আন্দোলন করছে তারা, যারা যুগপৎ আন্দোলন করছে না, তারাও।
“আজকে পত্রিকায় দেখবেন, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) একটা স্টেটমেন্ট দিয়েছে, এই সরকারের অধীনে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। চরমোনাইয়ের পীর সাহেব দিয়েছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বলছে পরিষ্কার করে, আমরা এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার যারা জনগনের ভোটে বিশ্বাস করে না, যারা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না, যারা জনগণের উপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায়, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।”
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে এক দফার আন্দোলনে নামা বিএনপির মহাসচিব শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে একথা বলেন।
বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন বাড়ার চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এখনই পেটাতে শুরু করছে, এখনই গুলি করতে শুরু করেছে, এখনই রাতে বাড়িতে থাকতে দেয় না। মিথ্যা মামলার ওয়ারেন্ট নিয়ে হাজির হয়।
“হাই কোর্টে জামিনের জন্য গেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ সাহেব, বাসায় যেতে পারেননি রাস্তার মধ্যে থেকে তু্লে নিয়ে গে্ছে।”
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখন আমরা যে যুদ্ধে নেমেছি, যে সংগ্রামে নেমেছি, এটা বিএনপির যুদ্ধ নয়, বিএনপির সংগ্রাম নয়, তারেক রহমানেরও নয়, মির্জা আলমগীরেও নয়। এই যুদ্ধ এদেশের ১৮ কোটি মানুষের। তার স্বাধীনতা রক্ষা করবার, তার ভোটের অধিকার রক্ষা করবার, তার বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষা করবার।”
সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “প্রশাসনের ভাইদেরকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভাইদেরকে, বিচার বিভাগের ভাইদেরকে বলব যে, আপনাদের যে সুনির্দিষ্ট কোড আছে, যে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব সংবিধান অনুযায়ী, সেই কাজ করবেন। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না।”
আগের মতো ‘হবে না’
গত দুই বারের মতো নির্বাচন এবার করা যাবে না বলে আওয়ামী লীগকে সতর্ক করেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।
তিনি বলেন, “পরপর দুটো নির্বাচনকে একেবারে হাস্যকর অবস্থা করে দিয়ে তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। আবার পাঁয়তারা শুরু করেছে। প্রত্যেকদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন যে, ডিসি পরিবর্তন, এসপি পরিবর্তন, পোস্টিং, প্রশাসনের হাজার হাজার লোককে পদোন্নতি। এটার উদ্দেশ্যে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে আবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে।
“এবার আর এটা হবে না। এবার বাংলাদেশের মানুষ তারা জেগে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষ এটা প্রমাণ করতে সফল হয়েছে যে, এই দেশে গণতন্ত্র নাই, প্রমাণ করতে সফল হয়েছে যে, গত দুইটা নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে চুরি হয়েছে, ডাকাতি হয়েছে, ভোট নিয়ে গেছে।”
‘কারাগারেও নির্যাতন’
বিভিন্ন মামলা দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের পর কারাগারেও নির্যাতন চালান হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করে ফেলেছে। এখন প্রতিদিন গায়েবি মামলা, জামিন দেওয়া হয় না। কোর্টে নিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারাগারে।
কারাগারে আবার আরেক নির্যাতন শুরু হয়েছে। মনে হয় যে, মধ্যযুগীয় বর্বর যুগে বাস করছি। কারাগারে এখন ২৪ ঘণ্টা লকআপে রাখে যারা আমাদের ছেলেরা আছে। এটা কোনো সভ্য দেশে, গণতান্ত্রিক দেশে, স্বাধীন দেশে চলতে পারে না।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমি কিছুক্ষণ আগে আমাদের এক ছাত্রনেতাকে দেখলাম তার সারা শরীরে ৪৮টা গুলির ক্ষতচিহ্ন। কালকে গিয়েছিলাম এক যুব নেতাকে দেখতে… তার ডান পা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে।
“এর নাম গণতন্ত্র! এরা আবার কালকেও বলছেন, ‘আমরা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন দেব’। শেয়ালের কাছে মুরগি দেওয়ার সেই গল্প আছে না, তার মতো।”
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে ‘ফরমায়েসী’ রায়ের প্রতিবাদের এই সমাবেশ হয়।
পরিষদের আহ্বায়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অ্ধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুতফর রহমান, অধ্যপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম লাবু, ডা. রফিকুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, আইনজীবী আবেদ রাজা, সাংবাদিক কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, শহীদুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের মো. হানিফ, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, এমট্যাবের হাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন//।