আন্দোলনেই আদায় হবে এক দফা ।
প্রায় ১৭ বছর ধরেই ক্ষমতার বাইরে, দেড় লাখ মামলা, এসব মামলায় প্রায় ৫০ লাখ আসামী, অসংখ্য নেতাকর্মী কারাবন্দী, একের পর এক হামলা, নির্যাতন। কিন্তু কোন কিছুই আর ভাবাচ্ছে না বিএনপিকে। বরং অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে দলটি এখন অনেক বেশি সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ, নেতাকর্মীরা আন্দোলনের বিষয়ে প্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী। যে কোন কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নামছে সাধারণ মানুষের ঢল। দেশের মধ্যে জনসমর্থনের পাশাপাশি বিদেশেও এখন বিএনপি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন চলমান আন্দোলন সম্পর্কে তৈরি হয়েছে ইতিবাচক মনোভাব। এটিকে কাজে লাগিয়েই এখন সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন সফল করতে চায় দলটির হাইকমান্ড। তাই সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে অনড় রয়েছে দলটি। দলের শীর্ষ নেতাদের বিশ্বাস আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হবে এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হবে।
সরকারের পতনই এখন প্রধান লক্ষ্য মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এই দেশ, দেশের মানুষ কেউ নিরাপদ নয়। আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য,অস্তিত্ব ফিরে পাবার জন্য এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ জীবন দিয়ে রাস্তায় নেমেছে। রাস্তায় নেমে এই সরকারকে সরানোর জন্য সংগ্রাম শুরু করেছে। আমি বিশ্বাস করি যে, এই সরকারকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরাবে এবং জনগণের যে সরকার সেই সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের স্বাধীনতার সব অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিচারব্যবস্থা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচারালয়ের ওপর ভর করে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আমাদের নেতাকর্মীদের সাজা দিচ্ছে। অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর হামলা, মামলা, গ্রেফতা করা হচ্ছে। কিন্তুতাতে কি আন্দোলন বন্ধ করা যাবে? যতই নির্যাতন করুক, কারাগারে ঢোকাক, আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে এনে আমরা ঘরে ফিরব। স্পষ্ট কথা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আমাদের এক দফা দাবি সংসদ ভেঙে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন হবে। এছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দলটির নীতিনির্ধারণী নেতারা বিশ্বাস করেন যে, দেশি-বিদেশী কোন চাপেই সরকার বিএনপির দাবি মেনে নেবে না। তাই দাবি আদায় করতে হলে রাজপথ দখলের কোন বিকল্প নেই। এজন্য দলটি আন্দোলনের কৌশলও সাজাচ্ছে সেভাবে। বিশেষ করে ঢাকা কেন্দ্রিক একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থেকে সরকারকে চাপে ফেলতে চায় দলটির নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহিংস ভূমিকা না নেয়ার জন্য যে বিদেশী রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর চাপ রয়েছে সেটিকে সহায়ক হিসেবেই বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। দলের নেতারা মনে করেন, সময় যতই গড়াবে আন্দোলনের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে। ফলে এক দফার আন্দোলন একটি পরিণতিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীন সরকারকে বিদায় জানাতে চাই। কিন্তু ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে যে কোন আন্দোলন একটা পর্যায়ে চূড়ান্ত মাত্রায় রূপ নেয়। তিনি বলেন, সরকার দেশকে যে অবস্থার দিকে নিয়ে গেছে, এই অবস্থায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে, জনতার প্রচ- চাপে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, দলের ভেতরে আলোচনা হচ্ছে- এবার যদি না হয় তাহলে কারো অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের অনেক নেতার মামলা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে কোনভাবেই যদি এই সরকার আবার টিকে যায় তাহলে দলের অনেক নেতাকর্মী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবন্দী হতে হবে। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায়, নিজেদের বাঁচার জন্য হলেও রাজপথে প্রাণপণ লড়াই করতে হবে। এক্ষেত্রে কারো যদি কোন শিথিলতা পরিলক্ষিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাথে সাথেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যেমনটি সর্বশেষ ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছে। এটির মাধ্যমে মূলত অন্যান্য নেতাদের বার্তা দেয়া হয়েছে এবার কোনকিছুতেই ছাড়া দেয়া হবে না। পদ-পদবী দখল করে ঘরে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। দায়িত্ব নিলে মাঠে থাকতেই হবে।