নারী অধিকারে অঙ্গীকারবদ্ধ ইসলাম ধর্ম ।
যে কোনো ধর্মের চেয়ে নারী অধিকার তথা নারীর প্রাপ্য মর্যাদার প্রতি ইসলাম শ্রদ্ধাশীল। জননী হিসেবে, কন্যা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে ইসলামে নারীর যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে নেই। মহান আল্লাহ তায়ালা অতি যত্ন করে তৈরি করেন প্রথম মানব আদম (আ.)-কে। বাসস্থান হিসেবে দান করলেন চির শান্তির নীড় জান্নাত। উন্মুক্ত করে দেন জান্নাতের সব নেয়ামত। এত কিছুর পরও হজরত আদম (আ.)-এর মাঝে কী যেন অপূর্ণতা?
মহান স্রষ্টা হাওয়া (আ.)-কে সৃষ্টির মাধ্যমে দূরীভূত করলেন সে অপূর্ণতা। আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতির আদি পিতা মাতা তাঁরা। নর ও নারী উভয়ের সমন্বয়ে মানবজাতি। অথচ দুনিয়ার জীবনে নারী জাতি ছিল অবহেলিত। বিশেষ করে জাহেলিয়াতের আরব যুগে নারী ছিল চরম নির্যাতিত। তাদের মানবীয় ন্যায্য অধিকার ছিল ভূলুণ্ঠিত। অর্থ – সম্পদকে পুরুষ নিজেদের মালিকানা স্বত্ব মনে করত। উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে নারীদের ছিল না কোনো নির্ধারিত অংশ। আরবীয় সমাজে কন্যা সন্তানের জন্মকে চরম অবমাননা মনে করা হতো।কন্যাসন্তান জন্মের প্রতি তাদের ঘৃণা এতই প্রবল ছিল যে, নিষ্ঠুর পিতা নির্দয় ভাবে নিজ কন্যাকে জীবন্ত কবর দিতেও দ্বিধাবোধ করত না। কিন্তু ইসলামই নারীর সম্মান, মর্যাদা ও প্রাপ্য অধিকারের ধারণাকে সামনে এনেছে।
মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নারীদের তেমনি ন্যায়সংগত অধিকার আছে পুরুষদের ওপর, যেমন পুরুষদের আছে তাদের (নারী) ওপর’ (সুরা বাকারা-২২৮)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে : ‘নেক আমল যেই করবে সে পুরুষ হোক বা নারী যদি সে ইমানদার হয় তাহলে অবশ্যই আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর আমি তাদের সৎ কর্মগুলোর বিনিময়ে উত্তম প্রতিদান দান করব।’ (সুরা নাহল-৯৭)।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মায়ের পায়ের তলে সন্তানের বেহেশত।’ দাম্পত্য জীবনে স্বামীর ওপর স্ত্রীর হক যথাযথভাবে আদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে ইসলাম। স্ত্রীর ন্যায়সংগত অধিকার দেনমোহর ও খোরপোশ না দেওয়াও হাদিস অনুযায়ী স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর ওপর জুলুমের শামিল।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, -কেয়ামতের দি ন পর্যায়ক্রমে একে একে প্রত্যেক নারী-পুরুষকে বন্দি অবস্থায় সমবেত সব হাশরবাসীর সামনে হাজির করা হবে এবং বলা হবে, এ হচ্ছে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে, যদি এর কাছে কেউ কিছু পাওনা থাক তবে আদায় করে নাও। এ সময় অধিকারহারা সেই নারী খুশি হবে যে পিতা, ভাই ও স্বামীর কাছে স্বীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। সে তাদের কাছ থেকে নিজের পাওনা আদায় করে নেবে।
অতঃপর তিনি সুরা মুমিনুনের ১০১ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন- ‘সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকবে না এবং একে অন্যকে জিজ্ঞাসাবাদও করবে না।’ সেদিন করুণাময় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজের হক মাফ করে দেবেন, কিন্তু অন্য মানুষের পাওনা কিছুমাত্রও মাফ করবেন না। অতঃপর আল্লাহ ওই নারী বা পুরুষকে হাশরবাসীর সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে দাবিদারদের বলবেন, তোমাদের পাওনা বুঝে নিতে এগিয়ে আসো।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আল্লাহ ফেরেশতাদের নির্দেশ দেবেন, ‘এর নেক আমল থেকে প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা অনুসারে দিয়ে দাও।’ এভাবে সব পাওনাদারকে দেওয়ার পর যদি অল্প পরিমাণও নেক আমল অবশিষ্ট থেকে যায় এবং সার্বিক আমলের নিরিখে সে যদি আল্লাহর প্রিয়পাত্র প্রমাণিত হয়, তবে তার অবশিষ্ট নেক আমল বাড়িয়ে দেওয়া হবে, যেন সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। পরিশেষে তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। আর সার্বিক বিচারে সে যদি পাপী প্রমাণিত হয় এবং তার কোনো সৎ কাজও অবশিষ্ট না থাকে, তবে ফেরেশতারা আরজ করবেন, ‘ইয়া আল্লাহ! এর সব পুণ্য ফুরিয়ে গেছে, অথচ এখনো অনেক পাওনাদার রয়ে গেছে।’ আল্লাহ তখন বলবেন, ‘এর পাপের সঙ্গে পাওনাদারদের পাপগুলো মিলিয়ে দাও এবং একে জাহান্নামে ফেলে দাও।’
মহান আল্লাহতায়ালার বাণী-‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন কর। অতঃপর তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে, তোমরা এরূপ জিনিসকে অপছন্দ করছ যাতে আল্লাহতায়ালা প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন।’ (সুরা নিসা-১৯)।
পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ করা হয়ছে-‘পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ, আর নারী যা অর্জন করে সেটা তার প্রাপ্য অংশ।’ ( সুরা নিসা, আয়াত-৩২)। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সেই ব্যক্তি ভাগ্যবান যার প্রথম সন্তান হচ্ছে কন্যা।’
রসুলুল্লাহ (সা.) আরও ইরশাদ করেন- ‘যার দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে এবং সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে, দীনি শিক্ষা দেয়, সৎ পাত্রস্থ করে, তাহলে সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।’
ইসলাম সামাজিক জীবনে নারীর সম্মান সমুন্নত রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ মুমিন নারীদের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহলোক ও পরলোকে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি।’ (সুরা আন-নূর, আয়াত ২৩)। উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, কোনো সতী-সাধ্বী নারীর ওপর ব্যভিচার ও অশ্লীলতার অপবাদ আরোপকারী ইহলোক ও পরলোকে অভিশপ্ত, তার জন্য গুরুতর শাস্তি অপেক্ষমাণ। দুনিয়ায়ও তাকে শাস্তি পেতে হবে।