সাঁথিয়ায় নদীতে সুতি জালের ফলে পানি প্রবাহে বাঁধা,আবাদ ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা । এতে বীজতলা তৈরিসহ রবি মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, মরিচ,রসুন,শরিষার আবাদ ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা করছেন এলাকার কৃষকরা।
মনসুর আলম খোকন,সাঁথিয়া(পাবনা)প্রতিনিধি: পাবনার সাঁথিয়ায় কাগেশ্বরী নদী ও পাউবো’র পানি নিষ্কাশন খালে ৪-৫ টি স্থানে অবৈধভাবে বাঁশের বেড়া ও সুতিজাল দিয়ে মাছ শিকার করায় বিলের পানি প্রবাহের গতিকে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে বিলের পানি বের হচ্ছে মন্থর গতিতে। এতে বীজতলা তৈরিসহ রবি মৌসুমে হাজার হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ, মরিচ,রসুন,শরিষার আবাদ ব্যাহত হওয়ায় আশঙ্কা করছেন এলাকার কৃষকরা।
জানা যায়, বেড়া উপজেলার কৈটোলা পাম্প হাউজ হতে মুক্তোর বিল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাকেশ্বরী নদীর-ডি-২ সেচখালের প্রায় ৩০ কিলোমিটার পানি নিষ্কাশন ক্যানাল রয়েছে। এ ক্যানাল দিয়ে বর্ষা শেষে সাঁথিয়া-বেড়ার প্রায় ১৬টি বিলের পানি নিষ্কাশন হয়। সুতিজালের বাধের জন্য পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কমছে না এসকল বিলের পানি। কাগেশ্বরী নদীর-ডি-২ পানি নিষ্কাশন সেচ খালটির উপর উপজেলার করমজা ইউনিয়নের শামুকজানি বাজারের দক্ষিণে রাহেদ খাঁর বাড়ির সাথে ও বড়গ্রাম দত্তপাড়া,সৈয়দপুর পরপর ৪ থেকে পাঁচটি স্থানে বাঁশের বেড়া ও সুতি জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে ছোট বড় সব ধরনের মাছসহ জলজ প্রাণী বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তবে সুতি পরিচালনা করা ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষকেরা প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
সরেজমিনে শামুকজানি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কাগেশ্বরী নদীতে রাহেদ খাঁ এর বাড়ির সামনে বাঁশ জালের বেড়া দিয়ে পানির গতি কমিয়ে মাছ শিকার করছে। এই সুতি পরিচালনা করে স্থানীয় প্রভাবশালী রওশন সরদার,অহেদ খাঁ,মালেক,রমজান খাঁ,রাহেদ খাঁ। তার একটু সামনের সুতি পরিচালনা করে বড় গ্রামের সুবাহান। কৃষকরা বলেন,ফসল যথাসময়ে বপণ করতে না পারলে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। চলতি আমন মৌসুমে জমিতে ধান পাকতে শুরু হয়েছে। অনেকের ধান পেকে যাওয়ায় কাটতে শুরু করেছে। জমিতে অতিরিক্ত পানি থাকায় যথা সময়ে ধান কাটতে না পারলে জমিতে থাকা পাকা ধান পানিতে নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাদের।তারা আরও জানান, কাগেশ্বরী নদীর এই খাল দিয়ে উপজেলার বড়গ্রাম মৌজা,গোপিনাথপুর ও ঘুঘুদহ মৌজার আইরেদহের বিল,টেঙরাগাড়ির বিল,ঘুঘুদহ বড় ও ছোট বিল, মুক্তোর বিল,সোনাই বিল,খোলসা খালি বিল,কাটিয়াদহ বিল ও গাঙভাঙ্গার বিলসহ অন্তত ১৬টি বিলের পানি নিষ্কাশন হয়। কিন্তু পানি নিষ্কাশন সেচ খালটির ওপর সুতিজালের বাধ দেয়ায় পানিপ্রবাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। দ্রুত সকল সুতিজাল উচ্ছেদ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান তারা।
কালাইচাড়া গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী, বড়গ্রামের সাইদ আলীসহ কয়েকজন কৃষক জানান,শামুকজানি ঝাপড়া বিলে আমাদের ১৫ থেকে ১৬ বিঘে জমিতে আমন ধান আছে। ধান কাইটা,কালাই, পিঁজের দানা,শরিষার আবাদ করবো। যদি সুতির কারণে বিলির পানি আটকে থাকে তাহলি আমাগরে পিঁজির দানা চারা, মুরিকাটা পিঁজ লাগানো ক্ষতি অয়া যাবিনি।
সুতি জালের সাথে সম্পৃক্ত থাকা সুবাহান আলী বলেন,আমরা অনেক আগে থেকেই সুতি দিয়ে আসছি। এবছর সুতির জন্য ক্যানেল ও নদীর সব কচুরি আমরাই পরিস্কার করছি। এ বিষয়ে কিছু লেখার দরকার নেই। আমি আপনার সামনাসামনি এসে কথা বলবো ভাই। আর এক সুতি জালের সাথে জড়িত থাকা রওশন সরদারের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে নি। সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলায় গত সমন্বয় মিটিংয়ে এ বিষয়ে সকল চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনা করেছি। কৃষদের লিখিতভাবে উপজেলা প্রশাসন,মৎস্য অফিস এবং আমার অফিস বরাবর অভিযোগ দিতে বলেছি। সুতিজালের কারণে পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হলে আমন ধান কাটতে ও পেঁয়াজের দানা দিতে বিলম্বিত হবে। বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাব চৌধুরী বলেন,আমি খবর পাওয়ার পর পরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন,কৃষকের ক্ষতি হবে আমরা এমনটা মেনে নেব না। প্রয়োজনে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রিফাতুল হক জানান, এ বিষয়ে কৃষদের অভিযোগে সুতির সাথে যাহারা জড়িত তাদের প্রথমে সচেতনতার পাশাপাশি সর্তক করা হচ্ছে। এরপরও যদি কেহ অবৈধ সুতি জাল দিয়ে পানি প্রবাহে বাধাঁ সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।